ব্যক্তির অজান্তেই মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে

0

একটি বেসরকারি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নিজের নামে নিবন্ধন করে একটি মোবাইল সিম ব্যবহার করে আসছেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে একই অপারেটরের আরেকটি সিম তার নামে সক্রিয় এবং সেটি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হয়েছে! এমন তথ্যে তিনি অবাক হন। শেষ পযর্ন্ত প্রযুক্তিগত তদন্তে জানা গেল যে সিমটি তার নামে নিবন্ধিত ছিল কিন্তু তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

শুধু সেই ব্যক্তিই নন, তার মতো অনেকেই সিম নিবন্ধন করে ব্যবহার করলেও, অজান্তেই তাদের নামে একাধিক মোবাইল সিম সক্রিয় রয়েছে। এবং এই সিমগুলি ব্যবহার করে, মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা, হুমকি এবং অর্থ পাচারও ঘটছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) -এর সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সাম্প্রতিক অপারেশনের পর এমন একটি চক্র ধরা পড়ার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে খুচরা এবং গ্রাউন্ড প্রোমোটাররা সিম নিবন্ধনের নামে বসে আছে। যখন কোন ব্যক্তি এই বিক্রেতাদের কাছে সিম কিনতে যায়, তখন তারা সেই ব্যক্তির অজান্তেই তার নামে একাধিক সিম নিবন্ধন করছে। ক্রেতা প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়ে সিমটি সক্রিয় করে অপরাধীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে নিরীহ মানুষকে হয়রানির আশঙ্কা যেমন আছে, তেমনি মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি রয়েছে।

নিবন্ধন জালিয়াতি: তদন্তে জানা গেছে যে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সাইবার ক্রাইম বিভাগের ই-ফ্রড টিম মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণঅ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা গেছে যে প্রতারকরা অন্যদের নামে নিবন্ধিত মোবাইল সিম ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা করছে। এরপর শাহাদাত সিকদার, জুয়েল হাওলাদার, হিমন আহমেদ, রুবেল আহমেদ ও অপু চন্দ্র দাস নামে পাঁচজনকে সিলেট ও ​​রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে নিবন্ধিত কিছু অপারেটরের ৫০৪ টি সক্রিয় সিম জব্দ করা হয়েছে।

ওই পাঁচজনকে গ্রেফতারের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সহকারী কমিশনার এবং সাইবার ক্রাইম বিভাগের ই- ফ্রড টিমের সুরঞ্জনা সাহা, বলেন, হিমোন আহমেদ, রুবেল আহমেদ এবং অপু চন্দ্র দাসকে প্রথমে সিলেটে অভিযান চালেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাজ হলো খুচরা বিক্রিতে সিম বিক্রি করা। যখন কেউ সিম কিনতে যায়, তারাই কৌশলে একটি সিমের পরিবর্তে একাধিক ব্যক্তির নামে একাধিক সিমের নিবন্ধন রাখে। তারপর তারা এই সিমগুলো বেশি দামে প্রতারকদের হাতে তুলে দেয়। ওই তিনজনের তথ্যানুযায়ী, শাহাদাত সিকদার এবং জুয়েল হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ভুয়া নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাথে প্রতারণা আসছিল। এই চক্রটি ফরিদপুর জেলায় ভাঙার প্রতারক চক্র।

সুরঞ্জনা সাহা আরও বলেন, অন্যদের এবং এই ব্যবহারকারীদের নামে নিবন্ধিত সিম বিক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গঠন করা হয়েছে। তারা যে প্রথম গ্রুপটিকে ধরল তা ছিল সিলেট থেকে সিম বিক্রি করে ওই এলাকার একটি প্রতারক চক্রের কাছে।

সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের শ্রমিকদের বেতন দিতে সিম কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন ছিল। হিমোন আহমেদ, রুবেল আহমেদ এবং অপু চন্দ্র দাসের চক্র সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। তারা অজান্তেই চা শ্রমিকদের নামে একাধিক সিম নিবন্ধন করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ৫০৪ টি সক্রিয় সিম সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

তদন্তের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তিন ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত সাত-আট মাসে অন্তত এক হাজার সিম নিবন্ধন করে প্রতারকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *