লালমাই-ময়নামতি।লোভের কোপ পাহাড়ে।একাধিক চক্র নতুন কৌশলে মাটি কাটছে।

0

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, রাস্তাঘাট উন্নয়ন বা সম্প্রসারণ, ব্যক্তিগত প্রয়োজন- যে কোনো নির্মাণ কাজের জন্য সবার চোখ প্রথমেই পড়ে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ে। পাহাড় কাটতে নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। লালমাই পাহাড় মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে কাটা হয়; আবার যখন, আবার সামনের দিক ঠিঠাক রেখে পেছনে কেটে সমতল । পাহাড়ের মাটি বিক্রির পর সমতল পাহাড় বিক্রির তৎপরতা দেখা গেছে কয়েকটি জায়গায়। এই সবের পিছনে একাধিক চক্র রয়েছে।

সম্প্রতি পাহাড়ের চারপাশে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন কৌশলে পাহাড় দখল করা এবং পাহাড়ের ক্ষত-বিক্ষত  অংশের দেখা মিলবে লালমাই-ময়নামতি জুড়ে ।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, জেলা সদরের দক্ষিণে ধর্মপুর-কোটবাড়ি সড়কের বিজয়পুর ইউনিয়নের শ্রীবিদ্যা এলাকায় পাহাড় কাটার কাজ চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ৭/৮ দিন আগে রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে একটি বিশাল পাহাড় কাটা হয়েছে। রাতে পাহাড় কাটা হয়।

জামমুরা এলাকার ডাইনোসর পার্কের পেছনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পাহাড়ের রাস্তার ধারে পিছনের মাটি কেটে সমতল করা হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, ১০-১২ জনের একটি চক্র পাহাড়টি বিক্রি করবে। ভাল দামের জন্য সমতল করে নিচ্ছে।

একই এলাকার বরুদা সড়কেও পাহাড় কাটার চিত্র দেখা গেছে। চারদিকে পাহাড় দেখা গেছে, মালিকানা দাবি করে বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। সরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানা ছাড়া পাহাড় কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে কেটেই চলছে। এর আগে, রেলপথ, চার লেনের রাস্তা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রাস্তার উন্নয়নে পাহাড় কাটা হয়েছে। পরিবেশ বিপন্ন করার পাশাপাশি ফল, বন, ঔষধি গাছ এবং বিভিন্ন পশু -পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (সিইউবি) পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শর্তসাপেক্ষে ছাড়পত্র পেয়েছে যে প্রায় ২০০ একর সম্প্রসারিত প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা বেশিরভাগ জমি পাহাড়ি। ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করে। ১৬ আগস্ট, পরিবেশ অধিদপ্তর একটি চিঠি জারি করে লালমাই পাহাড় কাটার বিষয়ে ‘পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন’ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কিছু পাহাড় কাটা হতে হতে পারে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, লালমাই পাহাড়ের একটি বড় অংশ এই উপজেলায় অবস্থিত। রাতের অন্ধকারে কিছু মানুষ পাহাড় কেটে থাকে। পাহাড় কাটার খবর পাওয়া মাত্রই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল ও জরিমানা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, কুমিল্লা শাখার সভাপতি মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, যারা পাহাড় কাটছে, তারা প্রভাবশালী হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি হওয়া উচিত।

কুমিল্লার পরিবেশ বিভাগের উপপরিচালক শওকত আরা কালী বলেন, “যখনই আমরা বন উজাড়ের বিষয়ে কোনো তথ্য পাই, আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করি।”

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। লালমাই-ময়নামতি পাহাড় বাঁচানোর জন্য যখনই পাহাড় কাটার তথ্য পাওয়া যায় তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *