শীত যত গড়াচ্ছে ততই হাসপাতালে রোগীর চাপ

0

পৌষ নামার সাথে সাথেই শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শীতের রোগবালাই। বয়স্ক মানুষ, নবজাতক এবং শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই রোগীর ভিড়। সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত আড়াই মাসে সরকারি হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন তিন লাখের বেশি মানুষ। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ১৭৪ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ২৬০ জন। সংস্থাটি জানায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের শীতে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। মৃত্যুর হারও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে রোগীদের দীর্ঘদিন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শীতকালে নবজাতক, শিশু ও পরিবারের বড়দের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে অক্টোবর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫০ জন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৮ তারিখে ভর্তি হয়েছেন দেড় লাখের বেশি। ঢাকা বিভাগে অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি রোগী ২৩০ হাজার ১৫৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী সিলেট বিভাগে ১৫ হাজার ১২৫ জন। বরিশাল বিভাগে শীতজনিত রোগে সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ১৯৮ জন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গতকাল সরেজমিনে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় ভুগছেন। এখানে শীত শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলের এক হাজারের বেশি শিশু সেবা নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আট মাস বয়সী ছেলে বসির আহমেদকে নিয়ে আজিমপুর থেকে আসা সাব্বির রহমান জানান, তিন দিন ধরে তার সর্দি ও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিউমোনিয়ার কথা জানান চিকিৎসকরা। এখন অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০৮ জন, এ মাসের ১৮ তারিখে এসেছেন ২৪৪ জন। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় অন্তত ৩০ শিশু মারা গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে ১৭৩ শিশু মারা গেছে। হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অ্যাজমা, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, বাতের মতো রোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা ও গরম পোশাক ব্যবহার করতে হবে। খাবারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আহমদুল কবির বলেন, শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় অধিদপ্তর ইতিমধ্যে একটি এপিডেমিওলজি টিম গঠন করেছে। এসব রোগের জন্য সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ রাখতে বলা হয়েছে।

বায়ু দূষণের কারণে ঢাকায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেশি বলে জানিয়েছেন প্যাথলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় শীতের তীব্রতা সবে শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখানে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষ আগের মতো মাস্ক পরছে না। ফলে মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা সংক্রমিত হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *