চনপাড়ার রায়হান গ্যাং জড়িত বলে জানা গেছে

0

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূরের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা জড়িত সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। ডেমরা ও রূপগঞ্জের কাছে চানপাড়া বস্তিতে একটি চক্রের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। দলের নেতৃত্বে রয়েছে রায়হান নামে পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী ।

গোয়েন্দাদের মতে, হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেসব ক্লু রয়েছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে ফারদিনকে চানপাড়ায় হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে রায়হানের গুন্ডা গ্রুপের কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এতক্ষণে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। রায়হান চানপাড়া বস্তির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সোমবার রাতে বলেন, ফারদিন হত্যার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। রহস্য সমাধানে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এদিকে ঘটনার সময় রায়হান গ্যাং ছাড়াও এ হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রায়হানের ভাই জালালও একজন মাদক ব্যবসায়ী। জালালের স্ত্রী শাহিদা ও ছেলে সাব্বির-সায়েমও ফেন্সিডিল কারবারি। সাব্বির ৯ নং ওয়ার্ডের মাদক ব্যবসায়ী রশ্মির বোনের আত্মীয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কিছুটা সময় লাগলেও তারা প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন। ৪ নভেম্বর রাতে চনপাড়ায় আসলে কী ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সন্দেহ করে অনেকের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়। চনপাড়া কেন্দ্রিক গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা নানা কৌশলে অনেককে ফাঁদে ফেলে। কেউ আবার তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। ওই রাতে চানপাড়ায় ফারদিন কোনো ধরনের ফাঁদে পড়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে গতকাল বিকেলে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ফারদিনের বাবার দায়ের করা মামলায় বান্ধবীকে পাঁচ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, মাদক তো দূরের কথা, আমার ছেলে জীবনে কখনো ধূমপান করেনি। গতকাল বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করেন ফারদিনের সহপাঠীরা। ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নুর উদ্দিন এসব কথা বলেন।

এদিকে বুশরাকে বিনা প্রমাণে হত্যা মামলায় আসামি করায় উদ্বিগ্ন ফারদিনের পরিবার। বুশরার মামা মাজহারুল ইসলাম জানান, কোনো প্রমাণ ছাড়াই এ মামলায় ছোট মেয়েকে আসামি করা হয়েছে। তাকে শুধু সন্দেহভাজন হিসেবে জড়ানো হয়েছে। আমরাও ফারদিন হত্যার প্রকৃত বিচার চাই। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে ফাঁদে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, বুশরাকে আসামি করা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমরা প্রথমে বাদীকে অনুরোধ করেছিলাম, কারণ আমরা কোনো সম্পৃক্ততা না পেয়ে বুশরাকে আসামি না করতে। তদন্তে প্রমাণ পেলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবে বলেও বলেছি। কিন্তু বাদী তাতে রাজি হননি। এরপরও বেশ কয়েকবার বোঝানোর পর বাদী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তিনি লিখিতভাবে বক্তব্য নিতে বাধ্য হলাম।

চানপাড়ায় যাওয়ার বিষয়ে ফারদিনের বাবার প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, বুশরার সঙ্গে কী ধরনের যোগাযোগ হয়েছে, তার ফোন ট্র্যাক করে বিষয়টি জানা যাবে। আমার সন্দেহ, পরের দিন ছেলের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু কেন রাত ১০টা পর্যন্ত বান্ধবীর সঙ্গে সময় কাটালেন।’

ফারদিনের বাবা অভিযোগ করেন, কিছু গণমাধ্যম ঘটনাটিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। জিডির ৪৮ ঘণ্টা পর কী অগ্রগতি হয়েছে তা সংশ্লিষ্টরা জানেন। আমরা জানি না জিডি থেকে লাশ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশি পদক্ষেপে আমরা সন্তুষ্ট নই। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বাবার অভিযোগ, ফারদিনকে মাথায় ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। কারণ খুনিরা তার মেধা ও মননকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।

লিখিত বক্তব্যে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে আমরা আস্থাশীল। অপরাধীদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যম আরও সতর্ক থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *