নিহত বুয়েটের ছাত্র ফারদিন।খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে, অভিযান চলছে

0

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ডেমরা-রূপগঞ্জ সংলগ্ন চনপাড়া বস্তির একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে। দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা বলেন, চনপাড়ায় এক নারীর বাড়ির কাছে এ ঘটনা ঘটে। তার বাড়ি বস্তির ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ওই ওয়ার্ডের মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। ফারদিন মাদকের স্পটে গিয়ে ফাঁদে পড়েন। এরপর তাকে জিম্মি করা হয়। আরও একটি নতুন ক্লু খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ফারদিনের সঙ্গে আরও এক যুবক ছিল। প্রথমে তার নাম পলাশ বলে জানা যায়। একটি সূত্র জানায়- তার বাড়ি রামপুরায়। পলাশও হত্যার শিকার বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই দিন থেকে পলাশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে গতকাল বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ফারদিনের মামলায় চনপাড়ার মাদক চক্রে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের সঙ্গে চনপাড়ার ওই নারীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে নিহত রাশেদুল ইসলাম শাহিন ওরফে সিটি শাহীন ওই নারীর বাড়ির পাশের  এলাকায় মাদকের কারবার করতেন।

প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানে আরও কিছু নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা যায়, ফারদিন তার মোবাইল সেটে দুটি অপারেটরের সিমকার্ড ব্যবহার করছিলেন। ৪ নভেম্বর বিকেল ৪টার পর গ্রামীণের সিমকার্ড আর সচল ছিল না। বেলা ১১টার দিকে তার রবির সিম কার্ডটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বান্ধবীর সঙ্গে মেসেঞ্জারে আড়াইটা পর্যন্ত চ্যাট করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাতে ফারদিনের সঙ্গে এমন কেউ ছিল যে তার ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বান্ধবীর সঙ্গে চ্যাট করছিল।

পুলিশের অন্তত দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারদিন হত্যার সঙ্গে বুশরার সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য তারা পাননি। ৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বুশরাকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় নামিয়ে দেন ফারদিন। এরপর বুশরা তার বাড়িতে চলে যান। এমনকি আইটি তদন্তেও বুশরার সঙ্গে কোনো সন্দেহজনক ফোনকল বা মেসেঞ্জার চ্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়নি। মামলা করার আগে ফারদিনের বাবাকে বুশরার ভূমিকা সম্পর্কে বেশ কয়েকবার অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু ফারদিনের বাবা তাকে আসামি করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কারিগরি তদন্তে তারা জানতে পারেন, ঘটনার রাতে ফারদিন কেরানীগঞ্জ, জনসন রোড, তারপর ডেমরা ও রূপগঞ্জ-সংলগ্ন চানপাড়ায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মোটরসাইকেলে এসব স্থানে যেতে পারেন। আর ওই মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন পলাশ।

এসব ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও নৌ-পুলিশ চোনপাড়ায় অভিযান চালায়।

ঘটনার রাতের বর্ণনা দিয়ে বস্তির বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান, তারা ঘটনাস্থলে অনেক হৈ-হুল্লোড়ের শব্দ শুনেছেন। সেই জায়গাটি নবকিশ্লয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে।

সেখানে কয়েকজনকে বসে মাদক সেবন করতেও দেখা গেছে। এরপর শীতলক্ষ্যার ৫ নম্বর অফিস ঘাট এলাকায় তাদের চলে যেতে দেখেন।

৪ এপ্রিল, সেখানে ফারদিনের যাতায়াতের সুত্র পাওয়া গেলেও, তবে তার পরিবার এবং সহপাঠীরা মন্তব্য করেন যে ফারদিনকে সিগারেট খেতেও দেখেনি’। ফারদিন কতবার চানপাড়া এলাকায় যাতায়াত করেছেন তা জানতে আইটি তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে গত শুক্রবার ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। তবে অভিযানে কাউকে আটক করা হয়েছে কি না তা জানাননি তারা। ফারদিনের ছোট ভাই আবদুল্লাহ বিন নূর তাজিম বলেন, ‘ভাইয়ের মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। তাকে কখনোই সিগারেট বা মাদক সেবন করতে দেখা যায়নি। তিনি কেন চানপাড়ায় গেলেন তা তদন্ত করুক পুলিশ। কেউ তাকে অপহরণও করতে পারে।’ ফারদিনের বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘নারীদের প্রতি ফারদিনের সম্মান ছিল অনুকরণীয়।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা ও রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি তদন্ত করছে র‌্যাব। বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *