আজ আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির সমাবেশ

0

গত ১৪ বছরে বৃহত্তর ফরিদপুরে একটি আসনেও জয় পায়নি বিএনপি। ২০০২ এবং ২০১৮ সালে, তারা এই অঞ্চলের পাঁচটি জেলার ১৫টি আসনে বিপুল ভোটে হেরেছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর ফরিদপুরের ১৬টি আসনের মধ্যে বিএনপি মাত্র একটিতে জয়লাভ করে। ২০০১ সালে, এটি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কিন্তু আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি ফরিদপুর অঞ্চলে মাত্র পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরে কখনোই ধানের শীষের জয়ের মুখ দেখেনি।

আওয়ামী লীগের এমন শক্ত দুর্গে আজ বিভাগীয় গণসভা করতে যাচ্ছে বিএনপি। খুলনার পর রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুরেও ধর্মঘট ডেকে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। রাজধানী ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ফরিদপুর হয়ে যেসব বাস চলাচল করে, সেগুলোও শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।

ফরিদপুরে যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পার্শ্ববর্তী জেলায় দলীয় কর্মীদের পুরনো মামলায় বাড়ি তল্লাশি ও গ্রেফতারের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গত এক মাসে যেসব জায়গায় বিএনপি সমাবেশ করেছে সেখানে তিন চাকার গাড়ি নিষিদ্ধের দাবিতে বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই সেসব হরতাল শেষ হয়ে যায়। ফরিদপুরেও একই কৌশল। আজ সকাল ১১টায় বিএনপির জনসভা শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর হরতাল চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। তবে বিএনপির চেয়ে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় যুবলীগের যুব সমাবেশে যোগ দিতে নেতাকর্মীদের বোঝাই একটি বাস গতকাল ফরিদপুর থেকে ছেড়ে গেলেও আটকা পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিএনপির কর্মসূচির আগের দিন সড়কপথে ফরিদপুরকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।

বাস না চললেও আগের দিন বিএনপির জনসভা মাঠ প্রায় নেতাকর্মীতে ভরপুর ছিল। জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। এই মাঠের ধারণক্ষমতা ২০-২২ হাজার। তবে গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। বাধা এড়াতে গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ ওই দিন থেকেই সমাবেশস্থলে অবস্থান করছেন। জুমার জামাজও মাঠে  পড়েন তারা।

ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশালের মতো ফরিদপুরেও বিএনপি কর্মীরা সভাস্থলে খোলা আকাশের নিচে, গাছের নিচে, বিভিন্ন ভবনের বারান্দায় মাদুর পেতে রাত কাটাচ্ছেন। মাঠে চলছে রান্না-খাওয়া। তারা দিনভর স্লোগান দিচ্ছেন। একদিনের সমাবেশকে তিন দিনে রূপান্তর করা হয়েছে। কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে সন্ধ্যায় গানের আসর বসে। শীতে অনেক বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আশেপাশের গ্রামের কয়েকজন বিএনপি কর্মীদের থাকার ও গোসলের ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল ফরিদপুরে এসে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন। কর্মীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রাতে খোলা আকাশের নিচে মাঠে থাকবেন বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

অনুষ্ঠানস্থলের কাছে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ও মহড়া না থাকলেও গতকাল বিকেলে নগরীর রাসেল স্কয়ারে জড়ো ও মিছিল করে ক্ষমতাসীন দল। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নৈরাজ্য হলে জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাসেল স্কয়ারে অবস্থান নেবেন।

যদিও শামীম হকের দাবি- বিএনপির সমাবেশ সফল করতে সহায়তা করছে আওয়ামী লীগ। তার মতে, বিএনপির সমাবেশে যারা এসেছেন তারা ফরিদপুরের অতিথি। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আমার ভাই, বন্ধু। বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেবেন না।

যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি : রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে পাঁচটি রুটের কোনোটিতেই বাস চলেনি। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এ জেলা থেকেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বরিশাল ব্যুরো জানিয়েছে, গত শুক্র ও শনিবার এ ধারায় বিএনপির সমাবেশের কারণে গণপরিবহন চলেনি। এ সপ্তাহেও ফরিদপুরে সমাবেশের কারণে দুই দিন বাস বন্ধ রয়েছে। বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবলু জানান, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বাসগুলো ফরিদপুর হয়ে ঢাকায় যায়। ফরিদপুরে ধর্মঘটের কারণে বরিশালের বাস চলছে না।

হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, ঢাকা থেকে আরিচা ঘাট ও বঙ্গগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সংযোগস্থলে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর যাওয়ার পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাহিরদিয়া সেতুতেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *