সংসদে প্রধানমন্ত্রী ।কারাগারে রওশন এরশাদকে ডিভিশন দেননি খালেদা

0

সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন,  সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে বিভাজন ছাড়াই কারাগারে রেখেছেন। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে গ্রেপ্তার করে ঠিক একই কাজটি করেছিলেন খালেদা জিয়া।

গতকাল রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়। প্রথা অনুযায়ী শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর সাজেদা চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদের বৈঠক আজ বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সামনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, এএসএম ফিরোজ, এসএমএম রেজাউল করিম, ওয়াসিকা আয়েশা খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ উপনেতা গোলাম গোলাম। . মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রওশন এরশাদ স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। জেল কোড অনুযায়ী স্নাতকোত্তর পাস করলেই ডিভিশন দিতে হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া তাকে ডিভিশন দেননি। এমনকি এরশাদও না। তাকে সাধারণ বন্দীদের সাথে রাখা হয়।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সেই নির্যাতনের কথা এখন ভুলে গেছে কিনা জানি না। সেটা অনেকেই ভুলে গেছেন। আওয়ামী লীগ সবাই নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, তারপর খালেদা জিয়া, তারপর জেনারেল এরশাদ। পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার, আমরা প্রতিনিয়ত এসবের শিকার হচ্ছি।

সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে হারালো উল্লেখ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সাজেদা চৌধুরী তার প্রতিটি কাজে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। এটা পুরানো, যেতে হবে. হয়তো একদিন ঠিক হয়ে যাবো। যাইহোক, তিনি কি করেছেন তা আমাদের মনে রাখতে হবে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাতে নির্যাতিত আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু আমাদের কেন? এখানে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা কম নির্যাতনের শিকার হননি।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান  সাজেদা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যান, তখন তিনি অপারেশনের রোগী। তার পেটে ব্যান্ডেজ করা হয়েছিল। ক্ষত ভালো করে শুকায় নাই। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সে সময় রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের উদ্যোগ নেন। তার শর্ত ছিল কারো নাম ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সাজেদা চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর নামকরণে অনড় ছিলেন। দলের ভেতর থেকেই তিনি যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্য তাকে কিছু লোকের রোষানলে পড়তে হয়েছে। এ সময় তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া তা করেননি। এমনকি প্রাক্তন বিমান বাহিনী প্রধান জামালউদ্দিন সাহেবকে তার নামে ঘড়ি চুরির মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল, কোনো বিভাগ ছাড়াই, এবং মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে জেলে রেখেছিলেন। এভাবেই তারা মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়। সে এভাবে মানুষকে নির্যাতন করত।

ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শোক প্রস্তাবের আলোচনায় আলাদা আন্তরিকতা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিন তিনি আমাকে বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দায় নিয়ে গেলেন। পুরোটা দেখিয়ে বললেন, কী আশ্চর্য সবাই এমন বোতল ছুড়ে মারে। সমুদ্রের পরিবেশও এখন ধ্বংস হচ্ছে। এটা কিছু করা প্রয়োজন. জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত। তিনি কমনওয়েলথের মানুষের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করতেন।’

এদিকে বর্তমান সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শেখ এ্যানি রহমানের মৃত্যুতে সংসদও শোক প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ অধ্যাপক খালেদা খানম, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবুল হাসনাত ও শাহানারা বেগম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খান, ভাষাগ্রামী, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রণেশ মনি, সাবেক সংসদ সদস্য ড. সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক তোয়াব খান, কিংবদন্তি গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যকার মাসুম আজিজ এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপির মা জাকিয়া বেগম খান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *