রোমাঞ্চকর জয়ে সেমির জানালা খোলা থাকল

0

যেকোনো জয়েই কমবেশি রোমাঞ্চ থাকে। কখনো ঝনঝন করে, কখনো সীমাহীন আনন্দে ভাসে। গতকাল ব্রিসবেনের গাবায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে ছিল রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা। মোসাদ্দেঘের শেষ বলের পর বাংলাদেশ দল ড্রেসিংরুমের কাছাকাছি এসে আলোক উদযাপন করে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জয়ের আশ্বাস, ঠিক সেই মুহূর্তেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে ম্যাচ অফিসিয়ালরা ঘোষণা দেন- খেলা শেষ হয়নি। সাকিব চমক নিয়ে মাঠে ফিরেন এবং শেষ বলে মাঠ ছাড়েন। ‘দুইবার’ ম্যাচ জেতার এমন ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে আর দেখা যায়নি।

অবশ্য বাংলাদেশ দলকে মাঠে ফেরাতে আম্পায়ারদের দোষের কিছু নেই। মোসাদ্দেঘের শেষ বলটি নো হওয়ায় উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান পপিং ক্রিজের ভেতর থেকে বলটি ক্যাচ দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন। সোহানের জন্য ভাগ্যবান, মোসাদ্দেক আবারও শেষ বলে ডট করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। একটু এদিক ওদিক হলেই ব্রিসবেনেই শেষ হয়ে যেত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। বাকি দুটি ম্যাচ আনুষ্ঠানিক হয়ে যেত। মোসাদ্দেগ তার স্নায়ু ধরে রেখে ফ্রি হিট বলটি দারুণভাবে ডেলিভারি করে জয় এনে দেন।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপের এই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকা, ক্রমাগত উন্নতি দেখানো, জিম্বাবুয়ের চেয়ে ভালো দল প্রমাণ করা এবং কোচ শ্রীধরন শ্রীরামের চাকরির ভবিষ্যত ঘিরে অনিশ্চয়তা – নাটকে ভারসাম্য ছিল। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, তিনটি ম্যাচ খেলে দুইটি জিতলে বাংলাদেশের প্রতি অন্যদের আগ্রহ বাড়বে। পয়েন্ট টেবিলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাবে। এমনকি টুর্নামেন্টে আরেকটি ম্যাচ না জিতলেও শীর্ষ চারে থাকা নিশ্চিত। আর শীর্ষ চারে থাকা মানে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাওয়া।

গতকালের জয় বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যাওয়ার জানালা খুলে দিয়েছে, কিন্তু জিম্বাবুয়ের শেষ হয়নি; বরং বাংলাদেশের চেয়ে জিম্বাবুয়ের সুযোগ বেশি। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচ খেলবেন সাকিব, যেখানে তাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তবে এই দুই দলের যে কোনো একটিতে পরাজিত হলে বাংলাদেশ স্বপ্নের সীমায় পৌঁছে যেতে পারে। এমনকি যদি তারা সব হারায় এবং জিম্বাবুয়ে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ভারতের কাছে হেরে যায়, সেমিফাইনালটি দলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নাজমুল হোসেন শান্তরা তাই জটিল সমীকরণে না গিয়ে সরাসরি ম্যাচ জিততে চান। এটা বিশ্বকাপের জন্য ভালো ব্যাপার। এমন কিছু ঘটলে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পাকিস্তানকে হারানো জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ছিল অনেক বেশি। বোলিংয়ে সেটা প্রমাণ করলেন আশীর্বাদ মুজারাবানি। বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে ভালো বোলিং করার পরও ব্যাটসম্যানরা ম্যাচের কাছাকাছি নিয়ে আসে। তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ৪২ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন শন উইলিয়ামসন। মুস্তাফিজ প্রথমে জিম্বাবুয়ের কিলার সিকান্দার রাজাকে ড্রেসিংরুমে পাঠালেও ম্যাচ হাতে নিতে সাহসী ব্যাটিং করছিলেন রায়ান বার্ল। আঁটসাঁট বোলিং সত্ত্বেও শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত আশা বাঁচিয়ে রেখেছে জিম্বাবুয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *