করোনা ও মৌসুমী জ্বর ঘরে ঘরে  , পরীক্ষায় অনীহা

0

রাজধানীর আজিমপুরের সরকারি কর্মচারী আসমা বিনতে ইসলাম গত সপ্তাহে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা। ওষুধ দিয়েও তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। করোনার সব উপসর্গ থাকলেও তার পরীক্ষা করানো হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এক সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন। এক সপ্তাহের মধ্যে, তার পরিবারের সাত সদস্যেরই জ্বর হয়েছিল কিন্তু একজনেরও পরীক্ষা করা হয়নি।

আসমার পরিবারের মতো অবস্থা এখন দেশের অনেক জায়গায়। করোনা সংক্রমণ ও ডেঙ্গুর সঙ্গে সারাদেশে হঠাৎ করেই বেড়েছে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে জ্বরের আশঙ্কা থাকলেও করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষায় তাদের বেশির ভাগই আগ্রহী নয়। করোনা ও ভাইরাস জ্বরের উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় অনেকের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশে তাপপ্রবাহ বইছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রার কারণে ঠান্ডা ও জ্বর বেড়েছে। তবে করোনা মহামারীর এই সময়ে অবহেলা না করে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতিটি ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর থাকলেও হাসপাতালে রোগীর চাপ নেই। করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়েনি। দেশে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও করোনার চতুর্থ তরঙ্গ নিশ্চিত হওয়ার পর দুটি পরীক্ষারই সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে উদাসীনতা। করোনা ও ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলেও পরীক্ষা করতে আসছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের শুরুতে করোনার জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজারে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তকরণের হার ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি মাসের ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২১ জন, যা বছরের প্রথম চার মাসে রোগীর সংখ্যার চেয়ে বেশি।

রাজধানীর মহাখালী ইন্টারন্যাশনাল এন্টারাল রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত কলেরা হাসপাতালেও কয়েকদিন ধরে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। অন্য সময়ে দৈনিক ৫০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হলেও এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৫০-এ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান চিকিৎসক বাহারুল আলম বলেন, তাদের হাসপাতালে স্বাভাবিকের তুলনায় এখন কম রোগী ভর্তি হচ্ছে। এই হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষাও আগের তুলনায় কম।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। ঈদ সফর শেষে রাজধানীতে ফিরলে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে পারে।

সরকারি প্যাথলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, বর্তমানে চার ধরনের জ্বর মানুষকে বেশি আক্রান্ত করছে- করোনা, ডেঙ্গু, মৌসুমি জ্বর এবং শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাল জ্বর। দ্রুত রোগী শনাক্ত না হলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা থাকে। তবে, ব্যক্তি যে ভাইরাসে আক্রান্ত হোক না কেন, অ্যান্টি-করোনা সিস্টেমকে মেনে নিতে হবে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত যৌথ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্বও নিশ্চিত করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, জ্বর দেখা মাত্রই পরীক্ষা করা উচিত। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। যেহেতু টাইফয়েড পানিবাহিত হয়; সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাইরাস জ্বর একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। এই কারণে, একজন ব্যক্তি অন্যকে সংক্রামিত করতে পারে। এই জ্বর সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এ কারণে এ ধরনের জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কম ভর্তি হন। এ ছাড়া ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ নিলে ভালো হচ্ছে। যেহেতু দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ টিকা দেওয়া হয়েছে, তাই করোনার কোনো জটিলতা নেই। এই কারণে লোকেরা পরীক্ষা করতে চায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *