গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বন্যা।‘ ছোলপোল এবং সোয়ামিক নিয়্যা সমস্যায় আছি’

0

ঘরে হাঁটু পানি। এই অবস্থায় ৪৫ বছর বয়সী শাহিনুর বেগম মাচার উপর একটি প্লাস্টিকের টুল রেখে তার উপর রান্নার চুলা বসিয়ে দুপুরের খাবার তৈরি করছেন। আমরা কয়েক দিন ধরে ডুবে আছি। হাত -পা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে শেখ শেখার হাতে। ছোলপোল এবং স্বামিকে নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি। আগে মানসের বাড়িতে কাম করি সোংসার চলছিল। একন বানের  সময়, কাউয়ো কামোত নেয় না। ঘরত যা আচিলো সাগ (সবকিছু) শ্যাষ হচে।

শাহিনুর বেগমের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের চর গলনা গ্রামে। তার স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী এবং কিছু করতে পারে না। ফলে স্বামী ও পাঁচ সন্তানের সঙ্গে শাহিনুরের কষ্টের জীবন।

ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপারে এই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের চারগলনা, ঝাঁঝাইড়, বারিকান্দি, ভজানডাঙ্গা ও কটকগাছা গ্রামে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। শুকনো মাটির এক টুকরোও নেই। চারগলনা গ্রামের কৃষক আশরাফুল মিয়া (৬০) এই বছরের নদী ভাঙনে তার সমস্ত জমি হারিয়েছেন। তিনি অন্যের জমি ভাড়া দিয়ে কোনোভাবে বসতি গড়ে তুলেছেন। পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাড়ির বেড়া ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার যা ছিল তা বিক্রি করে তার সংসার চলছে। সেই টাকাও শেষ।

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন জেলা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইউনিয়নটি উল্লাবাজার থেকে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক দিয়ে পৌঁছানো যায়। ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট সংলগ্ন বধ্যভূমি থেকে ফুলছড়ি ইউনিয়ন পর্যন্ত আরো আধা ঘণ্টার নৌকা ভ্রমণ। ফুলছড়ি ইউনিয়নের পিপুলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখি ভিন্ন দৃশ্য। গ্রামে বন্যার পানি থাকা সত্ত্বেও, নদী ভাঙ্গন মানুষের মধ্যে এক বিরাট আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িগুলো কোথাও বইয়ের মতো আর কোথাও হাঁটু গেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসবাস শুরু করেছেন। এছাড়াও রয়েছে গরু -ছাগল, হাঁস ও মুরগি।

পিপুলিয়া গ্রামের কাশেম মিয়া বলেন, ‘রাক্ষসী নদী হামারঘরে মালার ক্ষতি করেছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো কর ছিল না। তার উপর আবার ব্যাচ আচে। এই বানানো হাতুড়িঘরে, একটু স্যাগ চলে গেছে। ‘তিনি আরও বলেন,’ আমি সাত দিন ধরে পান করছি। ঘরে খাবার নেই। চেয়ারম্যানের গ্লাসে গেচিনো। আমি উপবৃত্তটি পাইনি।

ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মণ্ডল জানান, পিপুলিয়া গ্রামে প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার বসবাস করে। নদী ভাঙনের কারণে ১৫০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম সরকার বলেন, “আমার ইউনিয়নে অনেক পরিবার বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দকৃত ত্রাণ অনুপাত অপর্যাপ্ত।

উপজেলা ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শহীদুজ্জামান শামীম বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বন্যা ও নদী ভাঙনের শিকারদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন, মানবিক কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আরও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা আশা করি এক -দুই দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *