ঐতিহ্য।জিআই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে বগুড়ার দই

0

বগুড়ার দইসহ চারটি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্কস (ডিপিডিটি) অধিদপ্তরের ২৬ জুন সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া অন্যান্য পণ্য হল শেরপুরের তুলসিমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া এবং আশ্বিনা আম। এর মাধ্যমে দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।

জানতে চাইলে ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “বগুড়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আবেদন যাচাই-বাছাই করে গত ২৬ জুন দই ছাড়াও তিনটি পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি পণ্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই সেগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭, জেলা রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি বগুড়া দইকে একটি জিআই পণ্য করার জন্য ডিপিডিটির কাছে আবেদন করেছিল। প্রায় সাড়ে চার বছর আবেদনের পর স্বীকৃতি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী আলাল। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বগুড়ার দইয়ের স্বাদ নিয়েছে। তবে এগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এখন জিআই পণ্যের মর্যাদা সহ, আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই বগুড়া দইয়ের নাম ট্যারিফ লাইনে যুক্ত হবে।

জিআই স্বীকৃতির আবেদনে বগুড়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি উল্লেখ করেছে, ‘প্রায় দেড়শ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদরের প্রয়াত নীলকণ্ঠ ঘোষ প্রথম এই দই তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে দই বিক্রি শুরু হয়। বগুড়ার দইয়ের স্বাদের প্রশংসা করেছেন রানী ভিক্টোরিয়া ও রানী এলিজাবেথ। বগুড়ার দইয়ের সুনাম সারা দেশে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে নিয়ে যান। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এই দইয়ের স্বাদ নিতে বগুড়ায় আসেন এবং পণ্যটি দেশের প্রায় সব জেলায় বাজারজাত করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী যে বগুড়া দই এই স্বীকৃতি প্রাপ্য এবং এটি আমাদের অধিকার।’

আন্তর্জাতিক সম্পত্তি অধিকার সংস্থা (WIPO) এর নিয়ম অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে জিআই পণ্যগুলিকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রত্যয়িত করে। ২০১৩ সালে, ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণীত হয়েছিল। ২০১৫ সালে, ডিপিডিটি আইন প্রণয়নের পর জিআই পণ্যগুলির নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানায়। এরপর ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামদানি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ইলিশ, খিরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, কাটারিভোগ চাল। দিনাজপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম একে একে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বগুরের দইসহ চারটি পণ্য। এখন থেকে পণ্যগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে ৯৫টি পণ্যের তালিকা পাঠানো হয়। জিআই পণ্য হিসাবে নির্বাচনের জন্য, তারা আন্তর্জাতিক মেধা সম্পত্তি সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সমস্ত শর্ত পূরণ করে কিনা তা যাচাই করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। যাইহোক, প্রতিবেশী ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনে পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কের কন্ট্রোলার জেনারেল বলেছেন যে দেশে ৩৭০ টিরও বেশি জিআই স্বীকৃত পণ্য রয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে ভারতের কাছে নকশিকাঁথার মতো পণ্যের অধিকার হারিয়েছে বাংলাদেশ।

ডিপিডিটি সূত্রের মতে, কমপক্ষে ২৪টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হান্ডিভাঙ্গা আম, কুষ্টিয়ার তিলেখাজা, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, নোয়াখালীর মহিষের দুধের দই, লতিরাজ কচু, গোল্ডেন চিকেন, সাবিত্রী রাসকদম, কাঁঠাল মাছ। চাচুরি বিল, সুন্দরবনের নাক ফজলি আম। মধু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, জামালপুরের নকশিকাঁথা, ফুটি কার্পাস তুলা ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *