ফুল।মন মাতাচ্ছে ট্যাবেবুইয়া

0

পুরো গাছটাই পাতাহীন। কিন্তু গাছে সুন্দর হলুদ ফুল ফুটেছে। বাংলাদেশে সাধারণত এমন ফুল দেখা যায় না। তাই ময়মনসিংহ নগরীতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরে এ ফুল দেখতে উৎসুক মানুষ প্রতিদিন ভিড় করেন। কেউ ফুলকে বলে স্বর্ণবেল, কেউ বলে বাসন্তী ফুল। কিন্তু এই অসাধারণ ফুলটি এর কোনটিই নয়। এই ফুলের নাম তাবেবুইয়া, যার বাড়ি অনেক দূরে ল্যাটিন আমেরিকায়। ২০০৩-০৪ সালের দিকে ময়মনসিংহের তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ প্রশিক্ষণের জন্য ল্যাটিন আমেরিকার একটি দেশে যান এবং গাছটি সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন; তার অফিস চত্বরে রোপণ করা হয়। বেড়ে ওঠার পর এই বিচিত্র গাছটি এখন ফুলের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।

খেয়াল করলে দেখা যায়, গাছের প্রতিটি ডালের ডগায় সোনালি হলুদ ফুল ফুটেছে। বেশ কয়েকটি ফুল একত্রিত হয়ে একটি তোড়া তৈরি করে। কিছুক্ষণ পর একেকটা ফুল তোড়া থেকে আলাদা করে ঝরে পড়ছে। রোপণের সময় গাছটির নাম ছিল স্বর্ণবেল। কিন্তু ইন্টারনেট থেকে জানা যায় এর আসল নাম হলুদ তাবেবুইয়া। এটি Bignoniaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তাদের ফুল ফোটে। ফুলের সময় গাছের কোন পাতা নেই। পরিবর্তে, ফুল ফোটার কয়েকদিন পর নতুন পাতা গজায়। এই ধরনের গাছের গড় উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট এবং ঘের ৭ ফুট পর্যন্ত। এই গাছের অনেক ঔষধি ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এ গাছের কাঠ ও বাকলের তাৎপর্য রয়েছে। কাঠের গঠন খুবই মজবুত এবং সহজে পাটা যায় না। আগুনে সহজে পোড়ে না বলে একে ‘কঠিন কাঠ’ বা ‘লোহার কাঠ’ও বলা হয়।

বোটানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ময়মনসিংহের উপদেষ্টা ও আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, এটি একটি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ। ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশে এই গাছের আদি নিবাস। এর সাধারণ নাম তাবেবুইয়া। অনেকে একে হলুদ পাউই, ট্রাম্পেট ফ্লাওয়ার ইত্যাদিও বলে।

আনন্দ মোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বাংলাদেশে এই গাছের অস্তিত্ব আছে কিনা আমার জানা নেই। পর্ণমোচী গাছ প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর নয়। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমাদের দেশে রাস্তার ধারে তাবেবুইয়া গাছ লাগানো যেতে পারে। তবে বীজ থেকে এর বংশবিস্তার সম্ভব নয়, বরং কাটার পর সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের বন সংরক্ষক আবু ইউসুফ জানান, এই গাছে প্রতিবছর খুব অল্প সময়ের জন্য ফুল ফোটে। আমরা গাছের যথাযথ পরিচর্যা করছি। বীজ না থাকায় আমরা কাটার পর নতুন চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *