গরমে বাড়ছে জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া

0

সারাদেশে প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং তরল খাবার খাওয়া জরুরি।

গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, গরমে অসুস্থ হয়ে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা আবদুর রশিদ ও তার ছেলে ইমরুল কায়েসকে নতুন ভবনে ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তারা জানান, গরমে অস্থির লাগে, পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। ইমরুল জানান, তার বাবার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে স্ট্রোক হতে পারত।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের প্রধান আবাসিক চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গ্রীষ্মকালে বেশি রোগী ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াল জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া শ্রমিকদের মধ্যে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, পানিশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি। বাইরে কাজ করার সময় হঠাৎ কেউ বমি করলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের মেডিসিন ওয়ার্ডে রেফার করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে গুরুতর রোগীদের দ্রুত ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে কাশি-সর্দির সঙ্গে কারও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। অনেক সময় হিট স্ট্রোক, ব্রঙ্কিওলাইটিস হতে পারে। শিশুরাও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। গরমে ডাবের পানি ও ওরস্যালাইন ভালো কাজ করে। বাইরে থেকে বাসায় ফিরে হালকা রঙের সুতির কাপড় পরে গোসল করতে হয়।

রাজধানীর শিশু হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. সারাবন তহুরা জানান, হঠাৎ জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে এ হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গরমে শিশুরা দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। শিশুদের ডিহাইড্রেশনের প্রথম লক্ষণ হল মেজাজের পরিবর্তন, কান্নাকাটি। অনেক সময় মা-বাবা বুঝতে পারেন না শিশু কিসের জন্য কাঁদছে। শিশুদের অসুস্থতাকে ভয় না পেয়ে বয়স্কদের সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় হাত ধুতে হবে। নিয়মিত গোসল করুন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) মহাখালী হাসপাতালে গত শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৫৩০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৫১১, বুধবার ছিল ৪৯১। আইসিডিডিআর, বি কর্তৃপক্ষ বলছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব চলছে। শুধু গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

আইসিডিডিআর, বি প্রধান ড. বাহারুল আলম বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার রোগী বেড়েছে। এ হাসপাতালে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে পাঁচ শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসছেন। গরমে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করুন। অনিরাপদ খাবার বা পানি পান এড়িয়ে চলুন। রাস্তার পাশের খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মশলাদার খাবার, ভাজা ও পোড়া খাবার খাওয়া উচিত নয়।

সংক্রমিত হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, শিশুদের ডিহাইড্রেশন বোঝার উপায় হচ্ছে তারা নিয়মিত প্রস্রাব করছে কিনা তা দেখা। পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে। রোগী খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *