জাতীয় স্ট্রোক কনফারেন্স।দেশেই বিশ্বমানের স্ট্রোকের চিকিৎসা হচ্ছে

0

স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ। প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এতে অর্ধকোটি মানুষ মারা যায় ।এটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। আমাদের মতো দেশে দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যু ঘটে। স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে ২০৫০ সালের মধ্যে এই হার ৮০ গুণ বাড়বে। বাংলাদেশেও এই হার কম নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে দেশে প্রতি ১০০০ জনে প্রায় ১২ জন লোক স্ট্রোকে ভুগছেন। এই ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক অ্যান্ড নিউরোইন্টারভেনশন (বিএসএসএনআই) বুধবার স্ট্রোক বিষয়ে জাতীয় স্ট্রোক সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট প্রফেসর কাজী দীন মোহাম্মদ, প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ, প্রফেসর ফিরোজ আহমেদ কোরায়শী, প্রফেসর মো. বদরুল আলম ও অধ্যাপক আবু নাসার রিজভী।

উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি করা যায়, তত ভালো ফল পাওয়া যায়। স্ট্রোকের চিকিৎসায় বিলম্ব করলে উন্নতির সম্ভাবনা কমে যায়। তাই দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যান। জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা স্ট্রোকের তিন ঘণ্টার মধ্যে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন এবং তাকে আধুনিক স্ট্রোকের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাত দিন পর সে বাড়ি ফিরে যান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোকের বিশ্বমানের চিকিৎসা হচ্ছে। দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের সেবা দিচ্ছে। স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে না।

স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসার জন্য আগামী বছর বিএমএসইউর বাজেটে ১ কোটি টাকা রাখা হবে বলেও জানান তিনি। স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা দিতে স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক অ্যান্ড নিউরোইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ্যাপক কাজী মহিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স (এনআইএনএস) হাসপাতালে আধুনিক স্ট্রোকের সমস্ত চিকিৎসা করা হয়। স্ট্রোকের আধুনিক সব চিকিৎসা সরকার স্বল্প খরচে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক অ্যান্ড নিউরোইন্টারভেনশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আইভি থ্রম্বোলাইসিস নিয়মিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ স্ট্রোকের উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে। তিনি ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সোসাইটি অব নিউরোলজিস্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ কোরাইশী, স্ট্রোক আইভি থ্রম্বোলাইসিসের আধুনিক চিকিৎসা জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তরুণ নিউরোলজিস্টদের নিউরোইন্টারভেনশন নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম মন্ডল বলেন, স্ট্রোক চিকিৎসায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল অগ্রগামী হিসেবে কাজ করছে। এটি স্ট্রোকের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রদান করে। স্ট্রোক, কয়েল এমবোলাইজেশন, গ্লু এমবোলাইজেশনের আধুনিক চিকিৎসার সুবিধার্থে সরকার ২০ কোটি টাকার সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে। নাইন হাসপাতাল খুবই কম খরচে বিশ্বমানের স্ট্রোকের চিকিৎসা দিচ্ছে। আমাদের দেশের ছেলেরা স্ট্রোকের সব চিকিৎসা দিচ্ছে ভেবে মনটা গর্বে ভরে যায়।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক অ্যান্ড নিউরোইন্টারভেনশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুভাষ কান্তি দে বলেন, মুখ বেঁকে গেলে, এক হাত অবশ হয়ে গেলে, কথাবার্তা ঝাপসা হলে দেরি না করে হাসপাতালে নিতে হবে। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *