দাম ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ।পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

0

ভারতে উৎপাদন ক্ষতির খবরের সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

কয়েক বছর ধরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে। যা চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এক বছরে এই অপরিহার্য পণ্যের দাম কেজিতে ৩০০ টাকায় পৌঁছেছে। বিদেশ থেকে আকাশ পথে এনেও বাজার সামলাতে পারেনি। মিসর, তুরস্ক এবং চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। দেশে পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস হল ভারতীয় বাজারের চলাচল। ভারতে যদি পেঁয়াজ উৎপাদনে ক্ষতি হয় বা দাম বেড়ে যায়, দেশেও দাম বেড়ে যায়। এবারও তিনি ব্যতিক্রম ছিলেন না। ভারী বর্ষণ ভারতের মহারাষ্ট্রে নাসিকে আঘাত করেছে। আর ঢাকায় পেঁয়াজের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে গেছে। এই মশলা পণ্যের দাম মাত্র দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

শীতকালীন পেঁয়াজ মূলত বাংলাদেশে চাষ করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে লাগানো পেঁয়াজ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বাজারে আসে। এরপর আরও ছয় মাস বাজারে স্থানীয় পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের ওপর আমদানি নির্ভরতা পেঁয়াজের বাজারের অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ। ভারতের বাজারে দাম বাড়লে বা ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয়। সাম্প্রতিক জাহাজ ও ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধি এবং ডলারের বৃদ্ধি পেঁয়াজের দামেও প্রভাব ফেলেছে। এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে। তা ছাড়া, সময়মতো সরকারি পদক্ষেপের অভাব অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

গত রবিবার শত শত ট্রাক পেঁয়াজ বেনাপোল ও হিলিবন্দার হয়ে দেশে এসেছে। গতকাল ভারত থেকেও পেঁয়াজের ট্রাক এসেছে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ব্যবসায়ী ও কৃষক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪লাখ ২১,০০০ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। আমদানি অব্যাহত আছে। ফলস্বরূপ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা ছিল না যে পেঁয়াজের বাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। দেশের পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে টিসিবি গত মাসের শেষ সপ্তাহে তাদের পেঁয়াজ কেনার দরপত্র বাতিল করে।

তার মতামত জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশে এখনও মৌসুমি ভিত্তিতে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। উৎপাদন মৌসুমে এর দাম কম। এবং মরসুমের শেষে, দাম বাড়তে থাকে। পণ্যটি পচনশীল। ফলে বড় মজুদ সম্ভব নয়। এদিকে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এটি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এটি মূলত ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারত যদি রপ্তানি বন্ধ করে বা রফতানির দাম বাড়ায়, তা দেশের বাজারে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এবারও তাই হয়েছে। ভারতে ভারী বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়েছেন। তবে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার সবসময় কিছু নীতিগত উদ্যোগ নেয়। বাজার স্বাভাবিক হলে এই উদ্যোগগুলো নেওয়া হলে আরো বেশি ফল পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ, শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুল্ক কমানো দুই মাস আগে করা যেত এবং বলা যেতে পারে যে অক্টোবর থেকে শুল্কমুক্ত পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। তখন মানুষ ভাবত অক্টোবরে দেশে কম শুল্কের পেঁয়াজ আসবে। বাজার পর্যবেক্ষণ আরও সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *