বিশ্ব শিশু দিবস আজ।আট মাসে ২৩০১ শিশু বিয়ের পিঁড়িতে

0

করোনার দুই বছরে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অন্তত ১৫ শতাংশ শিশু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছে। এসব শিশুর বেশির ভাগই দরিদ্র ও প্রান্তিক। পারিবারিক আয় কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির কারণে হাজার হাজার শিশু বাল্যবিবাহে বাধ্য হয়েছে।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে মেয়েরা স্কুল থেকে ঝরে পড়া এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনার প্রভাবে তাদের শৈশব ও শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় সোমবার সারাদেশে পালিত হতে যাচ্ছে ‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘গরবে শিশু সোনার দেশে, ছড়ানো আলোর রশ্মি’।

প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হয়। শিশু অধিকার, সুরক্ষা এবং উন্নয়নের সাথে জড়িত সবাইকে আরও সক্রিয় ও সচেতন করতে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে  ১১ অক্টোবর পর্যন্ত শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হবে।

ন্যাশনাল গার্ল চাইল্ড অ্যাডভোকেসি ফোরামের ‘গার্ল চাইল্ড সিচুয়েশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২’ অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২৮টি জেলায় ২ হাজার ৩০১ জন মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ২৮৮ জন মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হয়। একই সময়ে ৫৮৯টি বাল্যবিবাহ রোধ করা হয়েছে। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এই ফোরাম চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশের ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় এবং অনলাইন মিডিয়া থেকে কন্যাশিশু নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া তারা মাঠপর্যায় থেকে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে থাকেন।

ন্যাশনাল গার্ল চাইল্ড অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার বলেন, বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬ জন মেয়ে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর বেশির ভাগই ঘটেছে সড়কে, বাড়িতে ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে। এ সময় তিনজনের ওপর এসিড নিক্ষেপ, ১৩৬ জনকে অপহরণ ও পাচার, ১৮৬ জন নিহত, ১৮১ জন আত্মহত্যা এবং ১৫ জন পর্নোগ্রাফির শিকার হন। এ ছাড়া যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৩ জন এবং নিহত হয়েছেন পাঁচজন। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৫৭৪ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সময় বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৫টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। সাত মাসে ২১ জেলার ৮৪টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিয়ের তথ্য পেয়েছে তারা। সংস্থাটি ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের মোট ২১টি জেলায় একটি সমীক্ষা চালায়। সংস্থার সমন্বয়কারী অর্পিতা দাস বলেন, এই বাল্যবিবাহের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে স্কুল বন্ধের কারণে মেয়েদের নিরাপত্তা সংকট, অভিভাবকদের চাকরি হারানো। এবং ব্যবসা বন্ধ. এছাড়া যেহেতু বাল্যবিবাহের প্রথা আছে, তাই অনেকেই করোনাকালকে বিয়ের সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। বলেন, এই বাল্যবিয়ের শিকার সবাই স্কুল ছাত্রী। তার মতে, বিয়ে করা এই সব মেয়েই পড়ালেখা থেকে ঝরে গেছে। আমরা এখন যে খবর পাচ্ছি তাতে আমরা ড্রপআউটের তথ্য পাচ্ছি।

করোনার সময়ে ঝরে পড়া শিশুদের তালিকা তৈরিতে কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি। অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিতি একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা হয়।

অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, গত এক বছরে ৪৭ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। গত ডিসেম্বরে, ২০২১ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় এক চতুর্থাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ৭৮ হাজার শিশুশ্রমে জড়িত। দেশের ২০ হাজার ২৯৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাউশি ১১ হাজার ৬৭৯টি বিদ্যালয়ের তথ্য পেয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী অঞ্চলে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি।

মাউশির তথ্যমতে, গত বছর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬১ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। অনুপস্থিত ছিলেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন। এর মধ্যে বাল্যবিবাহের কারণে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত এবং ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ শিশুশ্রমে জড়িত। অনুপস্থিত শিশুদের একটি বড় অংশ ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মাউশির মনিটরিং ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক প্রফেসর মোঃ আমির হোসেন জানান, অনেক শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকদের মৌসুমী কাজে সাহায্য করে বা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে টাকার বিনিময়ে শ্রম দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *