স্ট্রেইট ড্রাইভ।একদিন হতোই এমন

0

যে পাতাটি সবুজ ছিল, তবুও হলুদ হতে হবে-/ যে মুখটি তরুণ ছিল, তবুও ক্ষয়ে যায়… সময়ের এই সরল সত্যটিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন জীবনানন্দ। পরিবর্তনের এই ধর্ম আমরা সবাই জানি। তারপরও অনেক সময় স্বীকার করা ‘কঠিন’ হয়ে পড়ে। আমরা বয়স নিয়ন্ত্রণ করে মনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করতে পারি; কিন্তু তুমি কি তাকে থামাতে পারবে? সত্য হল যে এটি যখন শুরু হয়, তার একটি ‘শেষ’ও থাকে। এটি একটি প্রিয়জনের যদি গ্রহণ করা কঠিন; কিন্তু তবুও মেনে নেওয়াই একমাত্র উপায়।

প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যে নামগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, সেই নামগুলো ঘূর্ণনের স্বাভাবিক নিয়মে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। সর্বশেষ সংযোজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। টি-টোয়েন্টি থেকে দুইজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে (কেউ কেউ সৌজন্যের জন্য বিশ্রাম শব্দটি ব্যবহার করেন)। তার কয়েকদিন আগে তামিম ইকবালও নিজেকে সাবেক বলে ঘোষণা দিয়ে এই ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ঘূর্ণনের নিয়মে এমনটা হয়েছে।

এভাবে তারাও একদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্ভাবনা নিয়ে এলো। জাভেদ ওমর বেলিম, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ ছিলেন পাইলটদের উত্তরসূরি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে তাদের আগমন বাংলাদেশের ক্রিকেট যুগে একাধিক প্রতিভার সমান্তরাল বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছে। তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এত মানুষ হঠাৎ করে তাদের শূন্যস্থানে আহত হয়েছেন। বিসিবি সিনিয়রদের কাটানোর মিশন হাতে নিয়েছে ভাবতে কষ্ট হয়। কিন্তু সত্য হলো, আজ না হোক কাল, না কোনো দিন- এটা হবেই। আপনি যদি নিজে থেকে ‘অবসর’ ঘোষণা না করেন তবে আপনাকে বাদ পড়তে হবে।

শচীন টেন্ডুলকারকেও অবসর নিতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে বোর্ডকে। ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না বলে জানালেন শচীন, অবসরের পর কী করবেন! শচীন এখন ভালো আছেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ক্রিকেটের সাথে আছেন। কিছুদিন আগে বেন স্টোকসও শরীর কাজ না করায় ওয়ানডে ছেড়েছেন। তিনি আইসিসির কাছে একটি প্রশ্ন রেখে গেছেন – ক্রিকেটাররা এমন গাড়ি নয় যা জ্বালানীতে চালানো যায়।

ক্রিকেটারদের শরীর-মনের সঙ্গে লাগাতার লড়াইয়ে ক্লান্ত ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী নায়ক বেন স্টোকস। কিন্তু সবাই এই যুদ্ধে জিততে পারে না। রিয়াদে আনুষ্ঠানিকভাবে মাহমুদউল্লাহর বয়স সাঁইত্রিশ, মুশফিক সেখানে ছত্রিশ। আমাদের দেশের বাস্তবতায় তা আরও কয়েক বছর বাড়ানো যেতে পারে। মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে বয়সের কিছু দুর্বলতা ঢেকে রাখা যায়। মুশফিকুর রহিম, এখনও প্রথম মিরপুরে গিয়ে অনুশীলন করছেন। জাতীয় দলেও তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। নিদাহাস ট্রফিতে তার এবং মাহমুদউল্লাহর অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। রিয়াদেরও এখানে কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে – তাকে কি দীর্ঘমেয়াদী টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল? তিনি কি সিরিজে সিরিজে পছন্দের দল নিতে পেরেছিলেন? বোর্ডের পক্ষ থেকে হয়তো তার উত্তর দেওয়া হয়েছে।

অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সমন্বয়ের কথা প্রায়ই বলা হয় ক্রিকেটে। যাতে হঠাৎ কোনো ধাক্কা না লাগে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের এখন আর সেই ভয় বা শঙ্কা নেই। গত তিন বছর ধরে হারের ধারায় থাকা দলের কাছে হারার ভয় কী? বরং নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ থাকবে। তাছাড়া ড্রেসিংরুমে কানাঘুষা চলছে যে দলে সিনিয়ররা থাকলে দায়িত্ব নিতে পিছিয়ে পড়ে জুনিয়ররা।

টিম ম্যানেজমেন্টও এই সংকটময় সময়ে নতুন দলকে সমর্থন করতে চাইছে। অতীতে পরিবর্তনের উদ্যোগকে বারবার বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো উসকানি বা ইঙ্গিত বাইরে থেকে তারা আশা করেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *