ভোজ্য তেল।আবারও হাহাকার

0

ভোজ্যতেল নিয়ে আবারও হাহাকার শুরু হয়েছে। কারণ সয়াবিন ও পাম তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে খোলা পাম, সয়াবিন এবং বোতলজাত তেল পাওয়া যায় না। কোথাও চাহিদার তুলনায় পরিমাণ কম হলেও প্রতি লিটারে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ টাকা। অথবা পোলাও চাল, চা পাতা বা অন্য কোন পণ্য সাথে নিন।

ক্রেতারা বলছেন, বেশি দাম পাওয়ার আশায় তেল লুকিয়ে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। দুই ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করেও কারওয়ান বাজারে তেল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আরিফ হোসেন নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, কেউ তেল পাচ্ছেন না। একটি দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেছে। দাম ৮০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য হওয়ায় তিনি তেল কেনেননি।

বিক্রির জন্য তেল না পেয়ে খুচরা বিক্রেতারাও একই অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, এই বাজারের পাইকার ও ডিলাররা তেল আড়াল করতে কারসাজি করেছে। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারকে পাইকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তাদের দাবি, তেলের অভাবে তারা অন্য পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া ও মগবাজারের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। শুক্রবার সংকট আরও বেড়ে যায় যখন বিশ্বের বৃহত্তম পাম তেল উৎপাদনকারী ইন্দোনেশিয়া ২৮ এপ্রিল থেকে তেল রপ্তানি কমানোর ঘোষণা দেয়। চার-পাঁচ দিনে, ভোজ্য তেল বাজারে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কারো কাছ থেকে পাওয়া গেলে লিটারে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়। খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন প্রতি কেজি ১৯০ টাকা এবং পাম অয়েল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো খোলা সয়াবিন ও পাম তেল দিচ্ছে না। সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ কারওয়ান বাজারে পুষ্টি ব্র্যান্ড সয়াবিন তেলের ডিলার এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের বৃহত্তম ডিলার। কারওয়ান বাজার ও আশপাশের খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন ট্রাকে করে এই ডিলারের কাছে তেল আসে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক মো. সিদ্দিকী বলেন, কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করছে না। কখন তেল দেওয়া হচ্ছে না বা কেন দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব নিয়ে কথা বলার সময় নেই বলে দোকান ছেড়ে দিন।

এছাড়াও, বাজারের আরেক সয়াবিন ও পাম তেলের ডিলার বেঙ্গল অয়েল স্টোর এবং সোনালী ট্রেডার্সে প্রতিদিন তেলের ট্রাক আসে, খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলেও দাবি করছেন ওই দুই ডিলার।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, মিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছে। কিন্তু ভাউচারে সেই দামের উল্লেখ নেই। মিলাররা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তেলের দাম বেশি নিচ্ছে। তা ছাড়া বেশ কয়েকদিন ধরে তারা তেল সরবরাহ করছে না। শুধু তাই নয়, মিলাররা তাদের অত্যন্ত অনুগত ছাড়া আর কাউকে তেল সরবরাহ করছে না। সার্বিক পরিস্থিতি ভোক্তা বিভাগকে জানানো হয়েছে। ওপরের ভেতরে ভূত আছে। তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এই ভূতদের তাড়াতে হবে।

তবে ডিলাররা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও এখনই কোনো সংকট থাকবে না বলে মনে করেন তারা। পাঁচ থেকে ছয়জন তেল আমদানিকারক ও শোধকদের সঙ্গে কথা বলেছে । খোলা সয়াবিন ও পাম তেল সরকারী দরে এবং বোতলজাত সয়াবিন কমিশন অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তারা। ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন তেল দেওয়া হচ্ছে। তার পরও বাজারে কেন সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তাছাড়া তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে কোম্পানিগুলোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

দেশে পাম তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক কাজী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিদিন সারাদেশে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। সব কোম্পানি থেকে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টন তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। তাহলে বাজারে তেলের সংকট থাকার কথা নয়। পাইকারদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সারা মাসে এক ট্রাক তেল কেনেন না। কিন্তু এখন দৈনিক পাঁচ থেকে ১০ ট্রাক চায়। একবারে এত তেল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তারা কোনোভাবে মিলারদের কাছ থেকে তেল মজুদ করছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ তাদের ধারণা ভবিষ্যতে তেলের দাম বাড়তে পারে। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *