সুগন্ধি ট্র্যাজেডি।লঞ্চ মালিক তিনটি ‘বড় ভুল’ স্বীকার করেছেন

0

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পুড়ে যাওয়া ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ তিনটি ‘বড় ভুল’ স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে অনুমোদন ছাড়াই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন যুক্ত করা, অতিরিক্ত গতিতে চালানোর নির্দেশ দেওয়া এবং আগুন লাগার কথা জানার পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।

সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জ থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর লঞ্চ মালিকের মুখ থেকে এসব স্বীকারোক্তি বেরিয়ে আসে। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, এটা কোনো ভুল নয়। এটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর হামজালাল আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। এ পর্যন্ত তিনটি লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে জাপানে ছিলেন। ২০০০ সালে দেশে এসে একটি লঞ্চ কিনেন। তিনি এখন তিনটি লঞ্চের মালিক। যদিও ’এমভি অভিযান ১০’ লঞ্চটির চারজন মালিক ছিলেন, হামজালাল ছিলেন আসল মালিক এবং পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

মইন আরও জানান, অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে গত নভেম্বরে লঞ্চটিতে আরও শক্তিশালী ইঞ্জিন যুক্ত করা হয়। যাতে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। দেরিতে ছেড়ে গন্তব্যে পৌঁছালে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বেশি। এই ইঞ্জিনটি কোন স্বনামধন্য কোম্পানি প্রতিস্থাপন করেনি। সাধারণ মেকানিক বা ফিটারের সাহায্যে ইঞ্জিনটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আগের ইঞ্জিনটি চীনের তৈরি। বর্তমানে জাপানে তৈরি রিকন্ডিশন এবং ইঞ্জিন যোগ করা হয়েছে। লঞ্চের ইঞ্জিন প্রতিস্থাপনের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো প্রযুক্তিগত পরিদর্শন বা অনুমোদন চাওয়া হয়নি।

এছাড়া তিনজন কর্মচারীকে (মাস্টার ও চালক) লঞ্চটি পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি।

র‌্যাবের মুখপাত্র আরও জানান, লঞ্চে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার তার মোবাইল ফোনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি মালিককে জানান। তবে তিনি কোথাও কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবাকে জানাননি। অগ্নিকাণ্ডের পর লঞ্চের কর্মীরা জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চটিতে আগুন নেভায়। এতে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। ক্রুদের পরিবার থেকে কেউ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন দুপুরে লঞ্চ মালিককে অন্য লঞ্চের চেয়ে তিন ঘণ্টা আগে গন্তব্যে পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাতে বেশি যাত্রী পাওয়া যায়। তাই দ্রুত লঞ্চ চালানোর জন্য হামজালাল নির্দেশ দেয়। ইঞ্জিন পরিবর্তনের পর লঞ্চটি তিনবার বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। তার কর্মীদের জন্য মাত্র ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। লঞ্চটি দ্রুত গতিতে চলছিল। এ ছাড়া লঞ্চটির বীমা করা হয়নি। ইঞ্জিন ফেইলিউরের কারণে চলার সময় বিকট শব্দ হয়। চিমনিটি স্বাভাবিকভাবে ধোঁয়া নির্গত করছিল না। ফায়ার অ্যালার্ম ছিল না। এর আগেও একবার লঞ্চটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) চেয়ারপারসন নাসিমা বেগম বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত। সোমবার রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

নাছিমা বেগম বলেন, ওই লঞ্চে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না কেন? তা খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিটি জাহাজে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, লঞ্চ বা নৌযানে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট বলে কিছু নেই। প্রতিবারই এই লঞ্চগুলোর ফিটনেস ঠিক আছে কি না বা নিয়ম মেনে চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। এর জন্য প্রশিক্ষিত জনবলও লাগবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিশ্বাস করে যে প্রতিটি মানুষকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে হবে।

এ সময় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান ড. সামন্ত লাল সেন বলেন, ঝালকাঠিতে মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনায় ১৫ জন রোগী দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন আইসিইউতে এবং তিনজন লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। অন্য কেউ নিরাপদ নয়। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি।

মরদেহ শনাক্তের জন্য স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *