যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময়, ৬০০ কোটি  ডলার ফেরত পেল ইরান

0

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে ইরান তার বাজেয়াপ্ত করা নগদ ৬০০ কোটি  ডলারের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বন্দি বিনিময় চুক্তি সোমবার কার্যকর হয়েছে। গত মাসে কাতারের মধ্যস্থতায় করা চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের পাঁচজন করে মোট ১০ জনকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। মুক্তি পাওয়া পাঁচ মার্কিন নাগরিকের সবাই ইরানি বংশোদ্ভূত।

মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ইরানের তেল বিক্রি থেকে ৬০০ কোটি  ডলার বাজেয়াপ্ত করেছে। চুক্তির শর্তানুযায়ী এটি পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতারের একটি ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। গৃহবন্দী থাকা পাঁচ মার্কিন নাগরিককে তেহরান থেকে মুক্তি দিয়ে গতকাল বিমানে করে কাতারের রাজধানী দোহায় অবতরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ইরানে বন্দী পাঁচ আমেরিকানদের মধ্যে এই ব্যবসায়ী ছিলেন।

কাতারের একটি ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তেহরান তাদের মুক্তির চেষ্টা শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানানোর পর ইরান থেকে মুক্তি পাওয়া সিয়ামক নামাজি দোহা বিমানবন্দরে বলেন, “আমেরিকান নাগরিকদের জীবনকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ।” কারণ ইরান দ্বৈত নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় না, এই পাঁচজন তাদের ইরানের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে তাদের মার্কিন নাগরিকত্ব ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুক্তি পাওয়া পাঁচ ইরানির মধ্যে দুজন গতকাল দোহায় পৌঁছেছেন।

তারা তেহরানে যাচ্ছিলেন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজন থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে এবং তৃতীয়জন যাবেন অন্য দেশে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাঙ্কে জব্দ করা অর্থ ইরানের ফেরত প্রসঙ্গে জো বাইডেন বলেন, ইরান মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে অর্থ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমেরিকান নাগরিকদের মুক্তির বিষয়ে বাইডেন বলেন, বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বন্দী আমেরিকানদের দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো অগ্রাধিকার নেই।

পাঁচ ইরানিকে ক্ষমা করার পাশাপাশি, জো বাইডেন গতকাল ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এবং গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

ইরানে গিয়ে মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কর্মকর্তা বব লেভিনসন নিখোঁজ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা, ওই কর্মকর্তাকে হত্যা করা হতে পারে।

কিভাবে টাকা জব্দ করা হয়েছে

এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তেল বিক্রির টাকা ইরানের পাওনা ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আমলে পরমাণু চুক্তি বাতিল করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা স্থবির হয়ে পড়ে। এত দিন পর বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় সেই টাকা পেল ইরান। দুটি কাতারি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশটিকে দেওয়া হয়।

যারা মুক্তি পেয়েছে

ব্যবসায়ী সিয়ামক নামাজিকে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনেছে ইরান। বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া অন্যরা হলেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ মোরাদ তাহবাজ এবং উদ্যোক্তা এমাদ শারকি। বাকি দুজনের পরিচয় জানাতে চাননি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুক্তি পাওয়া ইরানিদের মধ্যে রয়েছেন রেজা সারহাংপুর এবং কামবিজ আত্তার কাশানি। তাদের বিরুদ্ধে ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ওয়াশিংটন। মুক্তি পাওয়া কাভেহ লোটফোলাহ আফ্রাসিয়াবিকে ২০২১ সালে তার বোস্টনের বাড়িতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মার্কিন প্রশাসন তাকে ইরান সরকারের গুপ্তচর বলে অভিহিত করেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত অপর দুই ব্যক্তি, মেহরদাদ মইন আনসারি এবং আমিন হাসানজাদেহকে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *