সম্রাটের মৃত্যুতে কাঁদছে বিশ্ব

0

প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারদের অসংখ্য আঘাত যাঁকে দমাতে পারেনি তিনি হেরেই গেলন ক্যান্সারের কাছে। পেলেকে মরণব্যাধি অসুস্থতায় বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল, যখন সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা দুশ্চিন্তায় রাত কাটায়। পেলে বারবার রোগভোগাকে ড্রিবল করেন। এবার জীবনের ডি-বক্সে ফাইনাল ট্যাকল সামলাতে পারেননি তিনি। যে ট্যাকল দিয়েগো ম্যারাডোনাকে বাদ দিয়েছিলেন। ফুটবল, জোগো বনিতো- সবই পড়ে গেল; শুধু রাজা নয়। সমস্ত পার্থিব বন্ধন পেরিয়ে এই ফুটবল কিংবদন্তি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সময় বিকাল ৩.২৭ মিনিটে সাও পাওলোর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮২ বছর বয়সী পেলে মারা যান। তার মৃত্যুতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে ব্রাজিল। পেলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে সাও পাওলোর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হবে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী রাখা হবে। সেখানে ফুটবলের রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন ভক্তরা। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পেলের মা সেলেস্তের বাড়ির সামনে। পেলের শতবর্ষী মা বার্ধক্যজনিত কারণে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তাই তিনি তার সন্তানকে শেষবারের মতো দেখতে পাবেন তার বাড়ির সামনে। ফুটবল কিংবদন্তি সান্তোস মেমোরিয়াল নেক্রোপোল ইকুমেনিকাল-এ সমাহিত করা হবে।

তার চলে যাওয়ায় সারা বিশ্ব কাঁদছে। টুইটারে একটি উজ্জ্বল মুকুট সহ একটি কালো ছায়ার একটি ছবি, উপরে থেকে আলোর রশ্মি দ্বারা আলোকিত, মুকুটটিকে ঘিরে রয়েছে৷ পেলের ক্লাব সান্তোস নো রাজার মতো একটি ছবিতে তারা কতটা দুঃখ প্রকাশ করেছে। চারিদিকে হাহাকার, শূন্যতা, কান্নার আওয়াজ- কয়েকদিন আগে মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো তার বাবার সঙ্গে ইন্সটাগ্রামে একটি আবেগঘন ছবি পোস্ট করেছিলেন। কেলিই বৃহস্পতিবার রাতে পেলের মৃত্যুর খবরটি ভেঙে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ধন্যবাদ, বাবা, সবকিছুর জন্য। আমি তোমাকে অবিরাম ভালবাসব। শান্তিতে থাকো বাবা!’ এর কিছুক্ষণ পরেই পেলের এজেন্ট জো ফ্রাগাও বললেন, ‘সম্রাট আপনিও চলে গেছেন।’ ঠিক দুই বছর এক মাসের ব্যবধান। দিয়েগো ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার পর পেলেও চলে গেলেন। এতে হতবাক সবাই। আবেগঘন চিঠিতে নেইমার লিখেছেন- “পেলের আগে ‘১০’ নম্বরটি ছিল একটি সংখ্যা। আমি এটি কোথাও, আমার জীবনের কোনো এক সময়ে পড়েছি। কিন্তু শব্দগুলো সুন্দর, পূর্ণ। আমি বলব, পেলের আগে ফুটবল ছিল শুধু একটি খেলা। পেলে সবকিছু বদলে দিয়েছেন। তিনি ফুটবলকে শিল্পে, বিনোদনে পরিণত করেছেন। তিনি গরীব, কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন এবং বিশেষ করে – এটি ব্রাজিলকে দৃশ্যমান করেছে। রাজাকে ধন্যবাদ, ফুটবল এবং ব্রাজিল তার মান উন্নত করেছে! তিনি চলে গেছেন, তবে তার জাদু থাকবে চিরকাল। পেলে চিরন্তন।’ বিশ্বকাপজয়ী মেসির কণ্ঠে, ‘শান্তিতে ঘুমোও।’ আর কাইলিয়ান এমবাপ্পের মন, যাকে তিনি নিজের মনে করতেন, তাও হু হু হয়ে গেছে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “ফুটবলের রাজা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু তার উত্তরাধিকার চিরদিন মনে থাকবে।” শান্তিতে ঘুমাও রাজা।’

দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। তাকে কেমো দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু এত কিছুর পরেও তার মুখের হাসি ম্লান হয়নি। টেলিভিশনে বিশ্বকাপে নেইমার-মেসির ম্যাচ দেখেছেন। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়ে ব্যথিত হলেও নেইমারকে ভেঙে না পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। যে মানুষটির অফুরন্ত শক্তি সমগ্র ফুটবল বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার তত্ত্বাবধানে ফুটবলকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছিল, ফুটবলের ‘কালো মানিক’ সমস্ত মহাকাব্যিক ইতিহাসকে পিছনে ফেলে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *