বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন জাপার মোস্তফা।রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন

0

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো নগরপিতার আসনে বসতে যাচ্ছেন তিনি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনি চতুর্থ স্থানে রয়েছেন।

২২৯টি কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল (হাটপাখা) পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন (হাটি) পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে ডালিয়া পেয়েছেন মাত্র ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।

এর আগে ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ত্রুটি ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে রংপুর সিটি নির্বাচন। শহরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। কয়েকটি কেন্দ্রে দুয়েকজন ভোটার দেখা গেলেও অনেক কেন্দ্র ফাঁকা। ভোটারদের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

কিন্তু শহরতলির বর্ধিত কেন্দ্রগুলোতে চিত্র ছিল ভিন্ন। উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। মানুষ ঢোল পিটিয়ে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। শহরতলির প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে ইভিএম কারচুপির অভিযোগও উঠেছে। অধিকাংশ ভোটার বলেছেন, তারা এই প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন নন। এই যন্ত্রটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে আগে কেউ তাদের প্রশিক্ষণ বা নির্দেশনা দেয়নি। এ কারণে তারা ভোট দিতে পারবেন না। কক্ষের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তারা সহযোগিতা করলেও সাধারণ মানুষ তা ঠিকমতো বোঝে না।

সকাল ১১টার দিকে বুড়িরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ভোটার ২০৯০ জন। সে সময় মাত্র ১৭৫ জন ভোট দিতে পারে। দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটার চকিউজ্জামান ও খায়রুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এরপর আর কেউ ভোট দিতে আসবে না। একজন ভোটার অজ্ঞতার কারণে ভোট দিতে ৩০ মিনিট সময় নেয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কেউ কেউ রেগে গিয়ে লাইন ছাড়ছেন। আঙ্গুলের ছাপ পড়া যায় না বলে বিড়ম্বনা আরও বেড়ে যায়। অনেকে হাত ধুয়ে আঙুল পরিষ্কার করছিলেন ইমপ্রেশন দিতে।

প্রিসাইডিং অফিসার বিধান চন্দ্র রাও বলেন, বিভিন্ন কারণে ভোটে বেশি সময় লাগছে। প্রথমত ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিতে অজ্ঞ। বোতাম টিপতে ভাবতে সময় নিচ্ছেন তারা। এতে অনেকেই আঙুলের ছাপ পান না। তিনি স্বীকার করেছেন যে প্রতি ভোটার ভোট দিতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগছে।

কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তানজিউর রহমান জানান, তার কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার ১৭০০ ও নারী ভোটার ১৬৮৮ জন। এলাকার ভোটাররা ইভিএম সম্পর্কে কিছুই জানেন না। সেজন্য সময় বেশি লাগে। সকাল ১০টায় ১৭০০ পুরুষ ভোটারের মধ্যে ১৫১ জন ভোট দিতে সক্ষম হন। এ সময় ১৫৫ জন নারী ভোটার ভোট দেন।

নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৯২২। দুপুর ১২টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পুরুষ ভোটার লাইনে কয়েকজন থাকলেও নারী ভোটার লাইন ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার রতন সরকার জানান, ওই কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে নারী ভোটার সংখ্যা ২২৪। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন মাত্র ৪০ জন। ভোটার আব্দুস সালাম ও আলমগীর হোসেন বলেন, ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ায় অনেকেই ভোট দিতে আসেননি। এ কারণে কেন্দ্রে উপস্থিতি কম। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শাহ আলম জানান, দুপুর ১২টায় ভোট দেন মাত্র ১৭০ জন। তবে বিকেলে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে বলে অনেকে জানিয়েছেন।

২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুরে প্রথম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। মোমবাতি জ্বালিয়ে ভোট দিতে হয়েছে নগরীর ভোটারদের। তবে মঙ্গলবার তৃতীয় সিটি নির্বাচনে ভোট দিতে মোমবাতি জ্বালাতে হয়নি ভোটারদের। কিন্তু কুয়াশা ছিল, কনকনে শীত, ঠান্ডা বাতাস। রংপুর সিটি মেয়র পদে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *