গণসমাবেশের আগেই রক্তাক্ত নয়াপল্টন।বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে একজন নিহত, অর্ধশতাধিক আহত

0

বিএনপির জনসভার দুদিন আগেই রাজধানীর নয়াপল্টনে লাশ পড়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে বুধবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পাল্টা ইট ছুড়তে থাকে বিএনপি কর্মীরা। এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। একজন নিহত, পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। নিহত মকবুল হোসেন (৪৫) মিরপুরের লালমাটিয়ার বাউনিয়াবাঁধের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে ২২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিন শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে সন্ধ্যায় সমাবেশের প্রচারে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থাকা দুটি ট্রাকই নিয়ে যায় পুলিশ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বেলা ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নয়াপল্টন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো নয়াপল্টন এলাকা ঘিরে ফেলে। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও সোয়াট সদস্যদের ভারী অস্ত্র নিয়ে অনুশীলন করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে হানা দেয়। সেখান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. বিষয়ক সম্পাদক। মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায় দলটি। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করার বিষয়ে অনড় বিএনপি। তবে বিকল্প জায়গা হিসেবে তারা আরামবাগ, জাতীয় ঈদগাহে যেতে রাজি হয়েছেন। তবে সরকার বলে আসছে, কোনোভাবেই বিএনপিকে সড়কে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। সোহরাওয়ার্দীর বিকল্প হিসেবে তারা খোলা মাঠ চাইলে তা দেওয়া হবে। গতকাল নয়াপল্টনে সমাবেশস্থল নিয়ে বিভিন্ন খুঁটিতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নেতারা শনিবার নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী  জানান, বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছিলেন কর্মী-সমর্থকরা। গতকাল সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। অফিসের আশপাশে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো নয়াপল্টনের সামনের সড়কে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে। এদিকে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা একে অপরকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেয়। নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের মসজিদ গলি, আনন্দ ভবন গলি, জোনাকি হল গলি, পল্টন লাইন, সিটিহার্ট গলি, বিজয়নগরসহ বিভিন্ন সড়কে জড়ো হন। ধাপে ধাপে বেরিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে। কাঁদানে গ্যাসের শেল থেকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয় দলীয় কর্মীরা। বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশের একটি ভবনে আগুন লাগে, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভে যায়। তবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল এবং বিজয়নগর সড়কে ইটের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে এসব ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।

বিকেলে পুলিশকে আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) নিয়ে নয়াপল্টন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। সংঘর্ষ শুরু হলে আহতদের সঙ্গে অনেক নেতাকর্মী বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আহতদের উদ্ধারে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়। বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। পুলিশের বিশেষায়িত সোয়াট ইউনিটের সদস্যরা বিকেল সাড়ে ৪টার কিছু পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে তার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

মকবুল নামের ওই যুবককে ডিএমকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *