বাধা সত্ত্বেও ফরিদপুরে বিএনপির বড় সমাবেশ

0

নৌকার জন্য বিখ্যাত ফরিদপুরে বড়সড় সমাবেশ করতে পেরেছে বিএনপি। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগের অজেয় দুর্গ গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ ও পুলিশি তল্লাশি পেরিয়ে ‘অবরুদ্ধ’ ফরিদপুরে আসেন। সমাবেশকে ‘ঠেকাতে’ হরতাল চলাকালে যানচলাচল না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় ফরিদপুর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালের পর এটি ষষ্ঠ জনসভা। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে এসব কর্মসূচি করছে ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। বিশাল জনসমাবেশের মাধ্যমে দলকে আবারো চাঙ্গা করছে। প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল। তিনি ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন। এবার দেশে এমন নির্বাচন হবে না।’ এরপর তিনি স্লোগান দেন, ‘এক দফা এক দাবি, কবে যাবেন শেখ হাসিনা’। সমাবেশে যারা আসেন তারাও তার সঙ্গে স্লোগান দেন। তিনি তার বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ফরিদপুরের প্রয়াত নেতা ও কৃতি ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার থেকে জনসভার মাঠ ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল। এর আগে আসা এসব নেতাকর্মীরা বাধা এড়াতে খোলা মাঠে দুই রাত কাটান। মাঠে চলছে রান্না-খাওয়া। একই দৃশ্য দেখা গেছে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশালে। তবে ফরিদপুরে রাতভর ঢোল বাজিয়ে গান গেয়ে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়।

গতকালের সমাবেশে স্কুল ভবনের মাঠ ও ছাদ ছিল বিএনপি কর্মীদের পদচারণায় পূর্ণ। হাজার হাজার মানুষ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠ, গ্রামের রাস্তা ও বাজারের তিন দিকেই ছিল জমায়েত।

খুলনা, রংপুর ও বরিশালের মতো ফরিদপুরেও বিএনপির সমাবেশের আগের দিন থেকে হরতাল ছিল। হরতাল ও প্রবেশ চেকের কারণে শুক্রবার ও শনিবার দেশের অন্যান্য অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ফরিদপুর। তবে বিএনপিকে শহরে ঢুকতে বাধা দেয়নি আওয়ামী লীগ কর্মীরা। বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে রাসেল চত্বরে অবস্থান করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ফরিদপুর শহরের প্রবেশপথে তল্লাশি চালালেও সমাবেশ এলাকা থেকে বিএনপিকে বাধা দেয়নি পুলিশ।

ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি ফরিদপুরে বড় সমাবেশ করে এসব বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করে বিএনপি। দলটির নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ আধিপত্য এখন আর নেই। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ভালো খেলবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘খেলা হবে’ স্লোগানের জবাব দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনিও ঘুরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন আর খেলতে দেওয়া হবে না। এখন মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথে থাকবে।’ আগের জনসভার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বাতিল করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে গণসংসদ গঠিত হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের শাসনে ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্র মেরামত করে জাতীয় সরকার গঠন করবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি বন্ধে বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে সংগঠিত করা হবে।

গত সপ্তাহে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের গণপরিবহনে আগুনের জন্য বিএনপিকে সতর্ক করেছিলেন। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাসের ওস্তাদ। ওয়ান-ইলেভেন আনার জন্য তারাই আগুনে সন্ত্রাস করেছিল। চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে গভীর গর্তে ফেলে দিয়েছেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপি মুক্তির পথ এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কেমন হবে তা তুলে ধরবে।

বিএনপির কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের খোঁজ নেওয়া হয়। তাদেরও গাড়ি থেকে নামানো হয়। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অটোরিকশা, ইজিবাইকই একমাত্র ভরসা। কিন্তু এগুলো থেকেও বাদ পড়ায় সাধারণ মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার প্রধান সড়ক বঙ্গ রোড ও রাজবাড়ী রোডের মোড়ে ছিল পুলিশি তৎপরতা। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যাচ্ছিলেন ভাঙড় মোতালেব মিয়া। তিনি জানান, তার মা অসুস্থ। তালমার জংশন থেকে ফেরত পাঠায় পুলিশ। পরে, ভাঙ্গাচোড়া হাটকৃষ্ণপুর হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার বিকল্প পথ নিন। তবে নগরকান্দা থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজ আছে বলে দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *