জলবায়ুর টাকায় পার্ক, সোলার লাইট

0

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) প্রকল্পগুলি এই চারটি শব্দ দ্বারা পরিবেষ্টিত: ‘জলবায়ু’, ‘পরিবর্তন’, ‘প্রভাব’ এবং ‘মোকাবিলা’। উপকূলীয় দুর্যোগ রোধ করা কতটা প্রয়োজনীয় তা যাচাই করার নজির নেই। স্বেচ্ছাচারী প্রকল্প গরীব মানুষের কোন কাজে আসে না। জলবায়ু তহবিলের টাকায় খুলনায় এখন চলছে ৯টি প্রকল্প। এগুলো সবই নগর ও শহর কেন্দ্রিক। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে রূপসা নদীর তীরে মাথাভাঙ্গা এলাকায় নির্মাণাধীন শেখ রাসেল ইকো পার্কে। এ ছাড়া নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় কেসিসির সোলার পার্কও জলবায়ু তহবিলের অর্থায়নে গড়ে তোলা হচ্ছে। সিসিটিএফের টাকায় রাস্তা ও নর্দমাও নির্মাণ করা হচ্ছে। নোনা পানিতে সবচেয়ে বেশি ভোগেন উপকূলবাসীরা। সুন্দরবনের পশুপাখির জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রকল্প থাকলেও দুর্দশাগ্রস্ত খুলনা উপকূলের মানুষের জন্য জলবায়ু তহবিলের কোনো প্রকল্প নেই।

খুলনার তিন উপজেলায় সৌরবাতি স্থাপনের তিনটি প্রকল্প চলছে। এসব প্রকল্পের শিরোনাম ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ওই উপজেলায় পরিবেশবান্ধব সৌরবাতি স্থাপন’। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে সোলার ল্যাম্প কীভাবে ভূমিকা রাখবে, তা বলতে পারেননি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা।

খুলনার পরিবেশকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, পার্ক, ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার চেষ্টা হাস্যকর। যথাযথ গবেষণা ও বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়াই প্রকল্প হাতে নিয়ে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে।

খুলনায় চলমান ৯টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে শেখ রাসেল ইকো পার্ক স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কাজটি করছে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ।

পার্কে গিয়ে দেখা যায়, রূপসা নদীর পাড়ে খাল খনন করে গাছ লাগানো হয়েছে। পার্ক এলাকায় প্রায় ১০ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। একই সংস্থা ‘সুন্দরবন যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ে বনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রকল্পটি বনের টাওয়ার মেরামত সহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য নেওয়া হয়।

টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পার্ক নির্মাণ জলবায়ু পরিবর্তনে কীভাবে ভূমিকা রাখবে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, ‘পার্কটিতে ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। পার্কে পরিবেশ উন্নয়ন, খাল কেটে মাছ ছাড়া হয়েছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ দেখতে যাচ্ছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা না রাখলে আর কি?’

২০১৯ সালের জুলাই মাসে, সিসিটিএফ ‘কেসিসি এলাকায় জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ উন্নয়ন’ নামে প্রকল্পের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর স্লুইসগেট ক্যানাল রোড মেরামত ও নগরীর সোলার পার্কের উন্নয়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক. আবিরুল জব্বার বলেন, ‘পার্কে গাছ লাগানো হয়েছে- এটি কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখবে। খালের পানিতে তলিয়ে যায় এলাকাবাসী। এটি একটি জলবায়ু বিপর্যয়। এ কারণে সড়কে উঠানামা করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পাইকগাছা পৌর এলাকায় সৌর বিদ্যুতায়িত রাস্তার বাতি স্থাপন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। চিলানেও একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোস্টাল ড্রাইভ মিউনিসিপ্যালিটিস টু কাউন্টার ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্টস ইন্সটল করে সোলার স্ট্রীট লাইটস ইন পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে’। একই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ফুলতলা উপজেলায়। তিন উপজেলার প্রতিটিতে বরাদ্দ রয়েছে এক কোটি টাকা।

পরিবেশকর্মীরা হতাশ : খুলনার পরিবেশকর্মীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত প্রকল্প কার্যক্রম দেখে হতাশ। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল সোসাইটি-বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, প্রকল্পে পরিবেশ ও চাহিদা বিবেচনায় না নেওয়ায় প্রকল্পটি মানুষের জন্য কাজ করছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *