‘তিন পাত্তি গোল্ডের ফাঁদে  ২০০ কোটি টাকা পাচার

0

উলকা গেমস লিমিটেড অনলাইন গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির অনুমোদন নিয়ে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করছিল। তারা দেশে ‘টিন পাত্তি গোল্ড’ নামে একটি অনলাইন জুয়া খেলাকে জনপ্রিয় করে তোলে। নিয়মিত জুয়াড়ির সংখ্যা প্রায় নয় লাখ। তাদের কাছে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হতো। উলকা গেমস লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জামিলুর রশিদ এভাবে করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভারতে পাচার করেছেন। তিনি এর আগে দুটি গেম তৈরির জন্য সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ রুপি অনুদানও পেয়েছিলেন।

অনলাইন জুয়ায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার র‌্যাব এ তথ্য জানায়। গ্রেফতারকৃত ছয়জন হলেন- জামিলুর রশিদ, সাইমন হোসেন, রিদওয়ান আহমেদ, রাকিবুল আলম, মুনতাকিম আহমেদ ও কায়েস উদ্দিন আহমেদ। রোববার রাতে রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪। এ সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ডডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, নগদ টাকা ও যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, উলকা গেমস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদের সাথে ২০১৭ সালে প্রতিবেশী দেশ মুনফ্রগ ল্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের বেতন দেড় লাখ টাকা। কোম্পানির অনলাইন জুয়া অ্যাপ ‘টিন পট্টি গোল্ড’ জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে এটিকে আরও প্রসারিত করতে এবং দেশে এটিকে বৈধ করার কৌশল খুঁজছিল। এক পর্যায়ে, একজন আইনজীবীর পরামর্শে, ২০১৯ সালের শুরুতে, তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ‘উলকা গেমস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির অনুমোদন পান। ওই বছর উলকা গেমসকে মুনফ্রগের ০.০১ শতাংশ শেয়ার দিয়ে দেশের গেমিং খাতের উন্নয়নে প্রায় দেড় কোটি টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। যেহেতু দেশে গেম ডেভেলপমেন্টের অনুমোদন রয়েছে কিন্তু অনলাইন জুয়া/ক্যাসিনোর অনুমোদনের সুযোগ নেই, তাই উল্কা গেমস ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আইনি অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা করে। এভাবেই ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ যাত্রা শুরু করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। উলকা গেমসের যাত্রা শুরু হয়েছিল গেম ডেভেলপমেন্টের লক্ষ্যে কিন্তু তারা মূলত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অর্থ দেশের বাইরে পাঠাচ্ছিল।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, টাকার বিনিময়ে ভার্চুয়াল চিপগুলো পরিবেশকদের মাধ্যমে বিতরণ করা হতো। বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিবেশকদের কাছ থেকে চিপ বিক্রির টাকা আদায় করা হয়। বর্তমানে উলকা গেমসের চারটি অ্যাকাউন্টে ৮০ কোটি টাকার বেশি রয়েছে। গত দুই বছরে তারা ব্যাংকের মাধ্যমে মুনফ্রগ ল্যাবকে ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে। উলকা গেমসের ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনসহ অফিস চালাতে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জামিলুর রশিদ ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করে দেশে ফিরে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল গেমে আসক্ত। ২০১৫ সালে, তিনি নিজেই মোবাইল গেম তৈরি শুরু করেন। ২০১৭ সালে, তিনি হিরোস অফ ৭১ এবং মুক্তি ক্যাম্প দুটি গেম বিকাশের জন্য একটি সরকারী অনুদান পেয়েছিলেন। সেই বছর পরে তিনি মুনফ্রগ ল্যাবে যোগ দেন। তিনি সর্বশেষ মুনফ্রগের কাছ থেকে মাসিক প্রায় ৪ লাখ টাকা বেতন পেতেন। এ ছাড়া বার্ষিক আয়ের ৯০-১০০ শতাংশ বোনাস পেতেন। তার অনেক টাকা, দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন জাগায় জমি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *