মনোনয়ন পাচ্ছেন না ১১ জেলা পরিষদের প্রশাসক

0

জেলা পরিষদের অন্তত ১১ জন প্রশাসক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

২০১৬ সালে নির্বাচিত জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সরকার নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। সব জেলায় বিদায়ী চেয়ারম্যানদের প্রশাসক হিসেবে পুনর্নিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন, যারা আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে দলের অফিসিয়াল প্রার্থীদের পরাজিত করেছিলেন।

তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ছাড়াও ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৭ অক্টোবর। মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর আগে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বৈঠকে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার গণপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড। এই বৈঠকের তারিখ এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে এই বৈঠক করার প্রস্তুতি চলছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারণী নেতা জানান, ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য দলের সংক্ষিপ্ত তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। মূলত এই তালিকা থেকেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে যোগ্য প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের নাম ওই তালিকায় রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক কাঠামোতে বিদ্রোহী প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় খেতাবও পাচ্ছেন না। এ কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় স্থান পায়নি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ  বলেন, দলের সিদ্ধান্ত সবার জন্য সমান। তাই পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। এই দলে বিদ্রোহের কোনো অবকাশ নেই।

এ কারণে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য তালিকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম রাখেননি দলের আটটি বিভাগীয় সাংগঠনিক দলের সদস্যরা। এমতাবস্থায় বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বে থাকা দলের সংশ্লিষ্ট প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা পর্যায় থেকে নামের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিটি জেলার জন্য কমপক্ষে দুজন নেতার নাম জমা দেন।

পিরোজপুরের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। গত নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও সাবেক এমপি সভাপতি শাহ আলমকে পরাজিত করেন।

জামালপুরের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নাম সম্ভাব্য তালিকায় নেই। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ারের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।

শেরপুরের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির রুমানও নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তালিকায় তার নাম আসেনি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন পালকে পরাজিত করেন।

মেহেরপুরের প্রশাসক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুলের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। গত নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলীকে পরাজিত করেন।

চুয়াডাঙ্গার প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা শেখ শামসুল আবেদীন খোকনের নাম সম্ভাব্য তালিকায় নেই। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জুর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।

সাতক্ষীরার প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামও বাদ পড়েছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তালিকায় তার নাম আসেনি। তিনি সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মনসুর আহমেদকে পরাজিত করেন।

নীলফামারীর প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। গত নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হককে পরাজিত করেন।

রাজশাহীর প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের নাম সম্ভাব্য তালিকায় নেই। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান ভুলুর বিপক্ষে জয়লাভ করেন।

নড়াইল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে সর্বশেষ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাসের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় নেই। গত নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলীকে পরাজিত করেন।

রংপুরের প্রশাসক ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাফিয়া খানমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়নি। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্য তালিকায় তার নাম রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী না হওয়া নেতাদের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় ছিল না। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান পিয়াল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ রহিম শহীদ (তিনি মৌলভীবাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন), বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশিদ (বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন)। ঝিনাইদহে), খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অজয় ​​সরকার, পঞ্চগড় জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *