তেলের দামের কারণে বাজারে সব পণ্যই বেশি দামি

0

চাল, সবজি, মাছ, মুরগি, ডিম—কিছুতেই হাত রাখতে পারি না। এর আগেই নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লাগে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন দামের ঘোড়া আরও লাফিয়ে উঠছে। দুই দিনের ব্যবধানে বাজার পরিস্থিতি ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাজারে সমস্ত পণ্য এখন আরও ‘ব্যয়বহুল’। তবে বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকরা আশ্বাস দিচ্ছেন যে, শীঘ্রই বাজারমূল্য মনিটরিং করা হবে এবং বাড়তি দাম লাগাম দেওয়া হবে।

তবে স্বস্তি নেই ক্রেতাদের মনে।

বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুল ইসলাম  রাজধানীর মগবাজারে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন ব্যবসায়ীরা চাল, ডাল, তেল বিক্রি করছেন, অন্তত এক সপ্তাহ আগে কিনেছেন। তারা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়েছে। তিনি জানান, ২৫ কেজির এক বস্তা মিনিকেট চাল কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কয়েকদিন আগে একই মানের এক বস্তা চাল কিনলাম এক হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে চার টাকা বেড়েছে।

গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। ওইদিন রাজধানীর বাজারে যেসব সবজি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল, গতকাল রোববার সেই সবজি ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা বাড়তি দামে। অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। মুরগির দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা এবং ডিমের দাম বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা।

মোটা ও মিনিকেট চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। নাজিরশাইল পাঁচ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। দূরপাল্লার ট্রাকগুলো পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়িয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। নতুন যে পণ্য কেনা হচ্ছে তার দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। ফলে পণ্যের ক্রয়মূল্য বেড়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চালের অন্যতম পাইকারি বিক্রেতা হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বেশিরভাগ চাল আসে কুষ্টিয়া, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে। এতদিন প্রতি ট্রাক ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফলে ট্রাকের ভাড়া ২১ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এছাড়া মিলগেটে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বাড়িয়েছে চাল মিল মালিকরা।

তিনি বলেন, একদিকে মিল পর্যায়ে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এই দুই অতিরিক্ত খরচের কারণে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা বেড়েছে।

দুই দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় এবং পাকিস্তানি মোরগ বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।

তেলের দাম বাড়ার পরের দিনই বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। গতকাল করল্লা, বেগুনসহ আরও কিছু সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।

প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। গত তিন দিনে ২৫ আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ৪৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।

সরকারের বাজার তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের আগে পণ্যের বেশি দাম নেওয়া অযৌক্তিক।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ খুঁজছেন। তাদের অজুহাতের শেষ নেই। এখন পর্যন্ত পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। তাই এখন পণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *