হালকা প্রকৌশল পণ্য।বিলিয়ন ডলারের পথে রপ্তানি

0

যেসব খাতে রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা হালকা প্রকৌশল খাত তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের ছোট ছোট কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানার মৌলিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে স্থান করে নিচ্ছে। এ থেকে আশা জাগছে খাতটি। দীর্ঘদিনের এই খাত এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার সময়, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন যে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি খাত যা ভবিষ্যতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক ছাড়া মাত্র চারটি খাত ছিল ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের ক্লাবে। চলতি অর্থবছরে অন্তত আটটি খাত যুক্ত হবে। এর মধ্যে হালকা প্রকৌশল খাতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরাও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। তারা বলছেন, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। কারণ উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের শিল্প পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা পেলে এই খাত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে। তবে এ খাতের সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও রয়েছে। সম্ভাব্যতা অর্জনে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমান রপ্তানি আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তার অভাবে তা অর্জিত হয়নি। দুই ধরনের সমস্যার কারণে হালকা প্রকৌশল শিল্প তার সম্ভাবনার দিকে অগ্রসর হয়নি – নীতি ও কাঠামোগত। এ খাতের অগ্রগতির জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। দেশীয়ভাবেও বিভিন্ন ধরনের হালকা প্রকৌশল খাত আমদানি-প্রতিস্থাপন শিল্প হিসেবে বড় অবদান রাখতে পারে।

তিনি বলেন, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে পোশাক বহির্ভূত খাত সমান সুবিধা পাচ্ছে না। বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ, ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পাওয়া- এসবই আলোক প্রকৌশল ও অন্যান্য শিল্প খাতে বৈষম্য। কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক বাধা রয়েছে। কোন আধুনিক প্রযুক্তি নেই, কোন উদ্ভাবনী এবং দক্ষ মানব সম্পদ নেই। উদ্যোক্তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সমস্যা দূর করতে পারলে রপ্তানি আয় বাড়বে।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বৈশিমাস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্লাস্টার ভিত্তিতে হালকা প্রকৌশল শিল্প গড়ে উঠেছে। সারা দেশে প্রায় ৫০,০০০ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, জিনজিরা, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক কারখানা রয়েছে। ঢাকার বাইরে বগুড়া, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় শিল্প-কারখানা গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা।

পণ্যের জন্য সাত ট্রিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। এতে বাংলাদেশের অংশ খুবই কম। বাংলাদেশে ডাইং, ওয়াশিং, প্লাস্টিক, টেক্সটাইল, পাট, কৃষি, নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতের মেশিন ও যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। আশার কথা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করছে। অনেক দেশই আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, উৎপাদিত যন্ত্রপাতির মান নির্ধারণ, আনুষ্ঠানিক বিপণন এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার সক্ষমতা অর্জনে সরকারের উচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিগত সহায়তায় এগিয়ে আসা। অনেক কোম্পানি আছে, যারা বড় রপ্তানি অর্ডার পায় কিন্তু কাঁচামাল ক্রয় করতে না পারার কারণে ডেলিভারি করতে পারছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। সরকার বন্ডেড গুদাম সুবিধা দিচ্ছে না। এ জন্য এ খাতের সম্ভাবনা অর্জনে সরকারি নীতি সহায়তা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *