১০ বছর পর, ফেসবুকে ছবি দেখে তার মাকে ফিরে পেলেন ছেলে

0

১০ বছর পর, ফেসবুকে ছবি দেখে তার মাকে ফিরে পেলেন ছেলে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি দেখে ১০ ​​বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ফিরে পেলেন ছেলে। ওই নারীর নাম সুফিয়া বেগম (৪০)।

ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা এ-লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের সহায়তায় চিকিৎসার পর সোমবার রাত সাড়ে ৮ টায় তাকে এসিল্যান্ড অফিসে নারীর ছেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সুফিয়া বেগম নরসিংদী জেলার মাধবদী গোপালদী গ্রামের এবাদিল মেম্বার মো. আলমের স্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বদনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তিনি দুই ছেলের মা।

মানসিক ভারসাম্যহীন সুফিয়ার বড় ছেলে (১৬) যিনি, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করছেন এবং তার ১৪ বছরের ছেলে আরমান তার গ্রামের বাড়িতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। সুফিয়ার স্বামী মো. আলম পেশায় একজন রিকশাচালক। তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর রিকশাচালক স্বামী অন্য নারীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন।

ওই নারীর বড় ছেলে মো.শাওন জানান, ১০ বছর আগে পারিবারিক কলহের কারণে তার বাবা ও দাদী তাদের দুই ভাইকে রেখে মা সুফিয়া বেগমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তখন তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভবঘুরে হয়ে যান। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে, দুই সন্তান তাদের মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও মাকে পাওয়া যায়নি।

৪ সেপ্টেম্বর রাতে তার খালা রাবেয়া খাতুন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেখে মায়ের ছবি শনাক্ত করেন।

একজন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী দীর্ঘদিন ধরে সোনাগাজী পৌর এলাকায় ভবঘুরে হিসেবে বসবাস করছিলেন। তার নগ্ন চলাফেরায় নারী -পুরুষ চরম বিব্রত হচ্ছিল। মাঝে মাঝে তাকে কাপড় পরানো হতো, কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে সেগুলো খুলে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াত। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস নিয়ে দু”খও  প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত কেউ ওই নারীকে শনাক্ত করতে পারেনি।

৩ সেপ্টেম্বর সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন ওই নারীর চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ নেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, ডাক্তার আশা প্রকাশ করেছেন ওই নারী সঠিক চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। একই দিন সন্ধ্যায় মেয়র চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং ফেনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায় -এর মাধ্যমে তাকে জেলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং নতুন জামাকাপড় কিনে দেন। তিনি তার যথাযথ চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেন।

প্রাথমিকভাবে ওই নারী জানান, তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। বাড়িতে তার মা, বোন এবং ভাই আছে। তিনি অন্য কোন ঠিকানা বলতে পারেননি। ওই নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণকারী ভ্যাগ্রান্টের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি শনাক্ত করার পর তার বড় ছেলে শাওন হোমনা থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিচয় নিশ্চিত করার পর হোমনা থানার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ ওই নারীর ছেলেকে সোনাগাজীতে পাঠান। তার ছেলে  মায়ের ভরণপোষণ করবেন এই মর্মে এসিল্যান্ডের কাছে একটি অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করে তার মাকে বুঝে নেন।এ সময় মেয়র খোকন আরও চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এদিকে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা গেছে, ওই নারী সাড়ে চার মাসের অন্ত .সত্ত্বা।

সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক, চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন, ফেনী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসেন মামুন, পৌর কাউন্সিলর আইয়ুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উপলক্ষ. মঞ্জিলা মিমি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সহায়, জুলহাস তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন রিপনও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *