অভিযোগের পর ভুক্তভোগীরা দেখল ‘জাদু’

0

তার নাম সালেহা খাতুন। সালেহা বেগম জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। ১৪ মে ২০১৭ তারিখে এই এই ‘বেগম’কে বাদ দিয়ে তাকে ‘খাতুন’ করার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। সাড়ে চার বছর এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করেও নাম ঠিক করতে পারেননি সালেহা। রোববার সিলেটে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে হয়রানির অভিযোগ তোলেন তিনি। অভিযোগের জবাবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শুকুর মাহমুদ মিয়া বলেন, তিনি এক মিনিটের মধ্যে কাজটি করবেন। মঞ্চে উপস্থিত দুদক কমিশনার (তদন্ত) সময় জহুরুল হক তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক মিনিট নয়, এক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি করবেন। চার বছরেও করতে পারিনি। আর এখন এক মিনিট বল!

একই বিভাগের আরেক অভিযোগকারী জুবের আহমেদ নাঈমও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেন। মাস পেরিয়ে গেল কিন্তু সমাধান মেলেনি। নির্বাচন কর্মকর্তাও তার কাজ ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনই নয়, বিভিন্ন সরকারি সেবা পাওয়ার অভিযোগও করেছেন ডজন খানেক ভুক্তভোগী। তাদের মধ্যে সালাহ উদ্দিন মুন্না নামে একজন পাসপোর্ট পেতে দুর্ভোগের অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে নাম, ঠিকানা ও জন্মতারিখ সঠিক থাকলেও ই-পাসপোর্ট পাচ্ছেন না তিনি। গিয়াস উদ্দিন নামে আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার এক প্রবাসী আত্মীয় পালিয়ে গিয়ে অনিয়ম পেয়েছে। সিলেট পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলাম প্রধান কার্যালয়ের পক্ষে ব্যাখ্যা দিলেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক। তিনি পরিচালককে উদ্দেশ্য করে বলেন, পাসপোর্ট নিয়ে টেম্পারিং করছেন কেন? সমাধান করা হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন সিলেটে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সিলেটে বসবাস করে এবং সিলেটের মানুষ পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন না? ক্লায়েন্টকে কভার দেখাবেন না। সিলেটের সমস্যা সিলেটেই সমাধান হবে। জবাবে পাসপোর্ট পরিচালক এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

রোববার রিকাবী বাজারের নজরুল অডিটোরিয়ামে দুদকের গণশুনানিতে অংশ নেন চার শতাধিক মানুষ। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, বিআরটিএ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, সড়ক ও জনপথসহ বিভিন্ন সরকারি ও আধা-সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যায়। বিভিন্ন অভিযোগের সরাসরি জবাব দেন সংশ্লিষ্টরা। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দুদকের শুনানিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এক মিনিটের মধ্যে, কেউ এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

ওসমানী হাসপাতালে ওষুধ চুরি ও পরীক্ষার সরঞ্জাম নষ্ট করার অভিযোগ অন্যতম। আবুল হোসেনের এসব অভিযোগের জবাবে উপ-পরিচালক ডা. মাহবুবুল আলম সেলিম মিয়া চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ ছিল, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকার ২৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। সেটেলমেন্ট অফিসার আব্দুল কাইয়ুমের ক্রয়কৃত জমি দুই ভাগে ভাগ করে টাকার জন্য কাজ করেছেন। সিসিক কাউন্সিলর কয়েস লোদী এবং গণপূর্ত প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় আম্বরখানা কলোনির উন্নয়ন না করে অর্থ পাচার এবং ডাস্টবিনের সমস্যার বিষয়ে কলোনির অভিযোগের জবাব দেন। দুই বছর আগে সিটি করপোরেশনে দায়ের করা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

শুনানিকালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে দুদক কমিশনার বলেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। কেন তারা আপনার পিছনে দৌড়াবে? বস কখনোই কর্মচারীর থেকে পিছিয়ে থাকে না। এখন থেকে এমনভাবে কাজ করুন যাতে লোকেরা আপনার পিছনে পিছনে ছুটে টাকা ও সময় নষ্ট না করে।

গণশুনানির সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *