রাজপথে ফেরার পরিকল্পনা করছে বিএনপি

0

ঢাকার প্রবেশপথে ব্যর্থ কর্মসূচির পর আবারও রাজপথে আসতে চায় বিএনপি। শুক্রবার নগরীর দুই এলাকায় পৃথক গণমিছিলের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। একই দিন ঢাকায় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। এখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে দলটি টানা ১২ দিনের বিরতি নিয়ে একযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামছে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাঠে থাকার প্রাথমিক কৌশল হলো মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে যাওয়া। এটা অবহেলা বা দায়িত্বহীনতা নয়; যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করতে নেতাদের প্রতি হাইকমান্ডের কঠোর বার্তা রয়েছে। নেতাকর্মীদের নতুন উদ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে এ কৌশল নেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, ২৯শে জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা অনেক কিছুই অর্জন করেছেন। এতে সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বে অবহেলা, নেতাদের মধ্যে কোন্দল, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের মতো বিষয়গুলো প্রকাশ পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে সরকারের কঠোর অবস্থানও বিশ্বজুড়ে প্রকাশ পেয়েছে। তবে নেতারা তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথ দেখাতে চান। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল যাতে না হয় সেজন্য কড়া নজর দেওয়া হচ্ছে। দায়ী নেতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দলটি অন্যদেরও পর্যালোচনা করছে। মূলত আগামীতে নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নেতা সঠিক অবস্থানে না থাকলে কর্মীদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। একজন নেতা তার আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনে সাহস না থাকলে নেতৃত্ব দিতে পারে না। একজন নেতার নেতৃত্ব কঠিন সময়ে স্বীকৃত হয়। বর্তমানে বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কঠিন সময় আর আসেনি। এখন যারা সাহস করে এগিয়ে আসবে, তারাই হবে প্রকৃত নেতা; ভবিষ্যতের জন্য বিএনপির কান্ডারী। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিটি কর্মী এখন নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত। তাদের ত্যাগ, পরিশ্রম ও দলের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই দল এতদূর পৌঁছেছে। তাই তারা রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত ও আন্দোলন সফল করার চেষ্টা করবে।

জানা গেছে, কয়েকদিন বিরতির পর ঘোষিত নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এবং কমলাপুর থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত পৃথক গণমিছিলে গণসমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই সর্বোচ্চ তছনছ করে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছেন। কর্মসূচি সফল করতে সক্রিয় নেতাদের মধ্যেও শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। ফলে গণমিছিলে শুধু নেতাকর্মীদের উপস্থিতিই নয়; সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশও হাজির হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন মহানগরের নেতারা।

কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে বলে জানান বিএনপি নেতারা। নিয়মিত প্রস্তুতি সভা ও আলোচনা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এসব সভা শুধু গণসমাবেশ নয়; ভবিষ্যৎ যে কোনো কর্মসূচিতে ১০০% উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দলের কেন্দ্র থেকেও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকা সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আসবে। এ কথা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের বলা হয়েছে। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সামান্যতম অবহেলাও বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দলটি। কর্মসূচি নিয়ে দলের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

২৯শে জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নেতাদের মধ্যে পদ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ওই দিনের কর্মসূচি ঘিরে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেওয়া দলের নেতাদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে, এমন গুঞ্জন আরও শাখা-প্রশাখা বেড়েছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দলের তদন্ত দলের করা প্রতিবেদনে অনেকেই আটকা পড়তে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *