জোটের রাজনীতি।কর্মসূচি নিয়ে ক্ষুব্ধ সমমনা বিএনপির নেতাকর্মীরা

0

রাজপথ দখলের লড়াইয়ে বড় দুই দলের সঙ্গে সমমনা জোট ও দল রয়েছে। তবে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে একই কর্মসূচিতে থাকা সমমনাদের নিয়ে টানাপোড়েন চলছে বিএনপির। অন্যদিকে কয়েকদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকলেও প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে আজ থেকে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪টি দল।

সরকার পতনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে টেনশনে রয়েছে সমমনা দল ও জোট। বিশেষ করে গত শনিবার পবিত্র আশুরার দিনে ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে তারা ক্ষুব্ধ। বুধবার লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে বিএনপির কাছে ব্যাখ্যা চাইবে গণতন্ত্র ফোরাম। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, কৌশলগত কারণে শেষ মুহূর্তে কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে।

দলগুলোর সূত্র জানায়, চলমান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির অন্যতম সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। অন্যান্য সমমনা জোট ও দলের চেয়ে এ জোটকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে বৈঠকে পবিত্র আশুরার দিন শনিবার বাদ দিয়ে রোববার সচিবালয়ের সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আলোচনা হয়েছে। হঠাৎ করে সমাবেশের পরদিন ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তারা বিস্মিত এবং হতবাক। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত ছিল।

গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচি ছিল সম্পূর্ণ অপরিণত ও অনড়। আমরা তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি এবং তারা এখনো কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও একক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। জনবলের দিক থেকে আমরা বড় নই কিন্তু রাজনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে আমরা বড়। বিএনপি আন্দোলনকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়, প্রশ্ন করেন তারা।

সূত্র জানায়, পরিস্থিতির কারণে গতকাল গণতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম বৈঠক করে। বৈঠকে পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করে সামনের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। আপাতত মঞ্চের গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তি ও মঞ্চের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচিও নিয়েছে জোটটি।

বিএনপির সমমনা সূত্র আরও জানায়, ঢাকার বাইরে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে ঢাকায় ঘেরাও কর্মসূচি সফল করা কঠিন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে সফল আন্দোলন সম্ভব নয়। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বিএনপির কর্মসূচি নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে এটি একটি বড় দল হিসাবে তাদের ব্যস্ততার কারণে হতে পারে। এটা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। এখন যে কোনো মূল্যে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো ভুল করা যাবে না। তাই আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব বলে মনে করি। কিন্তু গত শনিবারের কর্মসূচির পর মনে হচ্ছে তাদের আন্দোলনের চূড়া একটি ভবনের চতুর্থ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় চলে গেছে। এটা অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে।

তবে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কৌশলগত কারণে সমমনাদের বেশি আগে কর্মসূচির কথা জানানো সম্ভব নয়। কর্মসূচি ঘোষণার আগেই তাদের জানানো হয়। আমি নিজেই টেলিফোনে ও মেসেজে বলেছি। একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, শর্তের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব হয় না, বন্ধুত্ব হয় সমঝোতার ভিত্তিতে।

জোটের নেতারা বলেছেন, গত শনিবার ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলা, নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে জনসভা করেছে বিএনপি। শুরুতে বিএনপির কর্মসূচি এককভাবে ডাকা হলেও সমমনা দল ও জোটকেও রোববার রাতে একই কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়। কিন্তু ছোট দল ও জোটের পক্ষে তাৎক্ষণিক বা স্বল্প নোটিশে কর্মসূচি পালন করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকেই অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ফলে গণতন্ত্র ফোরামসহ দুই বা ততোধিক দল ও জোট এ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলেও অধিকাংশই এদিন কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *