চমেক হাসপাতালে সংঘর্ষের জন্য দায়ী কে ? চমেক হাসপাতালে সংঘর্ষ: সেই মুস্তাকিমের বাড়াবাড়ি দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

0

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুলিশের সঙ্গে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগী ও তাদের স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনায় মাদ্রাসাছাত্র মুস্তাকিমের বাড়াবাড়ি দেখছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা বলছেন, সেদিন পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকারীদের উসকে দিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন মুস্তাকিম।

শুধু তাই নয়, গত ১০ জানুয়ারি ঘটনার সময় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের মোবাইল ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেন সেদিন গ্রেপ্তার হওয়া মুস্তাকিম। এতে ওসির মোবাইলটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এসব ঘটনা তখনই ঘটছিল, যখন রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া থেকে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আনার খবরে চমেক হাসপাতালে আসছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা।

তখন রোগীদের আন্দোলনে সড়ক অবরোধ হয়ে গেলে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার সড়কে যানজট হয়। ফলে চমেক হাসপাতালে ঢুকতে ও বের হতে পারছিল না রোগী বহন করা বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স। পরিস্থিতি দেখে ঘটনাস্থলে থাকা পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু মুস্তাকিমসহ আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন।

সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কিডনি রোগী আবদুস সালাম বলেন, ‘কিডনি ডায়ালাইসিস ফি কমানোর জন্য আমরা চারদিন ধরে চমেকের ভেতরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলাম। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করছিল না, আমাদের দাবি মানা হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সেদিন সকালে সড়ক অবরোধ করেছিলাম, যাতে গণমাধ্যম আমাদের দুর্দশার কথা ভালোভাবে তুলে ধরে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আধা ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে সরে যাবো। কিন্তু মুস্তাকিমসহ কেউ কেউ বলছিল, দাবি আদায় করেই সড়ক ছাড়বে। যদিও দেখছিলাম, আমাদের অবরোধের কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ঢুকতে, বের হতে পারছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক ছেড়ে দিতে ওসি সাহেব অনুরোধ করলেও মুস্তাকিম কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। সে ওসির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। সেদিন মুস্তাকিমসহ কয়েকজন বাড়াবাড়ি না করলে ঘটনা এত বড় হতো না।’

আরিফ আহমেদ নামের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় ওসির মোবাইল ছিনিয়ে  নিতে চেষ্টা করেন গ্রেপ্তার হওয়া মুস্তাকিম। এতে ওসির মোবাইলটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চললেও পুলিশ কঠোর হতে শুরু করে দুপুর ১টার দিকে। ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।

চমেকের সামনের এক দোকানদার বলেন, ‘কিডনি রোগীরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু তাদের দাবি আদায় হচ্ছিল না। তাই তারা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করে, যাতে পত্রিকায় তাদের কথা ভালোভাবে প্রচার হয়। কিন্তু সেদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখায় দুর্ভোগ বেড়েই চলছিল। ওসি সাহেবও কৌশলে বুঝিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুস্তাকিমসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী ছিল বেশ আক্রমণাত্মক। তারা সড়ক ছাড়তে চাইছিল না, পাশাপাশি অন্যদের উত্তেজিত হয়ে তুলেছিল।’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ উত্তর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আরফাতুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা সেদিন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিল। এটি হাসপাতালের প্রধান সড়ক। পুলিশ বাধ্য হয়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।’

১০ জানুয়ারির সেই সংঘর্ষের ঘটনায় একইদিন দিবাগত রাতে পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় মুাস্তকিমকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এরপর পাঁচ দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন মোস্তাকিম।

এর এক মাসের বেশি সময় পর হঠাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি থানায় নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার ও এসআই আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন মুস্তাকিম। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন।এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, ১০ জানুয়ারি চমেক হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে থেকে সরে যেতে বললে মুস্তাকিম তার হাতে থাকা মুঠোফোন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। রোগীর স্বজনদের উসকানি দেওয়ায় মুস্তাকিমকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। আর মুস্তাকিমের মাকে লাথি মারেননি। ঘটনার সময় তার মা ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন।

উল্লেখ্য এই মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে গত ৩ জুলাই সোমবার স্ত্রীকে মারধর ও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আওলাদ হোসেন এর আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *