সেপ্টেম্বরে সর্বাত্নক মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ

0

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক তৎপরতা শুরু করবে ক্ষমতাসীন দল। এর আগে আগস্ট জুড়ে শোক মাসের কর্মসূচিসহ সার্বিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরে শুরু হবে সমন্বিত গণযোগাযোগ কার্যক্রম। সারাদেশে বিভাগ, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বড় বড় সমাবেশের আয়োজন করা হবে। কোথাও কোথাও গণসভা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব সমাবেশে যোগ দিয়ে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন সমন্বয় কমিটিও আলাদা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হবে। রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার সহযোগীদের আন্দোলন কর্মসূচিকে ঘিরে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস-সহিংসতা মোকাবেলায় রাজপথে চলমান শান্তি সমাবেশ ও তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। আগামী নির্বাচন ও বিএনপির সরকার উৎখাতের আন্দোলনের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।

এদিকে, বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলের সম্পাদকমণ্ডলী ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন। নির্বাচন পরিকল্পনা। ওই বৈঠকে সভাপতি ওবায়দুল কাদের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, চলতি মাসেও দলের রুটিন কর্মসূচি চলবে। প্রতিবারের মতো আগস্ট মাসেও দল ও সহযোগী সংগঠনের মাসব্যাপী শোক কর্মসূচি রয়েছে। শোকের মাসের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। সেপ্টেম্বর থেকে দলভিত্তিক নির্বাচনের ময়দানে নামবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতেও নেতাদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

এর আগে সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে দলকে শক্তিশালী ও নির্বাচনমুখী করার চেষ্টা করা হবে। এ লক্ষ্যে চলতি মাসেই তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে আনবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত মাসেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন শহর ও জেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে কয়েক দফা মতবিনিময় করেন। চলতি মাসে বিশেষ করে মহানগর ও জেলা শাখার নেতাদের যারা কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন এবং সম্মেলনের দীর্ঘ সময় পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি তাদের ঢাকায় ডাকা হতে পারে। এ পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৬-২৭টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া ৯টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্মেলনও বাকি রয়েছে। নির্বাচনের আগে নতুন সম্মেলন না হলেও এসব জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য নিয়োগ ও নবায়ন অভিযান জোরদারসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণের কোনো থানা ও ওয়ার্ড কমিটি আট মাসেও গঠন না হওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে উদ্বিগ্ন করছে। নির্বাচনের আগে এসব কমিটি গঠন ও নতুন নেতৃত্ব গঠিত না হলে নির্বাচনী মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত শেষ করতে বলেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ৫০টি থানা ও ১৩৯টি ওয়ার্ড এবং ১ হাজার ৪৮৫টি ইউনিটের সম্মেলন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সব ইউনিট কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণার পাশাপাশি অধিকাংশ ইউনিট কমিটিই পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রের বারবার তাগিদ, নির্দেশনা ও সতর্কতা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো থানা-ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়নি।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডে দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের জনগণকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গতকালের যৌথ বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি কৃষক লীগকে কৃষকসহ গণসংযোগ কর্মসূচি প্রণয়নের পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *