ফল।রংপুরে যার বাড়ি, তার হাতে হাঁড়িঙাভা আম

0

যশোর থেকে ঈদ করতে আসা জোনায়েদ ইসলাম ও তার স্ত্রী কনা বেগম রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে বড় আমের বাজারে হাঁড়িতে থাকা আম কিনছিলেন। এটা কোনা বেগমের কথা। এবার আমের ভরা মৌসুম। যিনি রংপুরে থাকেন, তিনি কি রংপুর থেকে স্বজনদের জন্য হাঁড়িঙাভা আম নিতে যেতে পারবেন না?

নগরীর সিও বাজার এলাকায় হাঁড়িঙাভা  আম কিনতে আসা সিদ্দিক হোসেন জানান, বাচ্চারা ঢাকায় থাকে। ঈদে তারা বাড়িতে আসতে পারেননি। তাই তিনি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের জন্য ২০ কেজি আম পাঠাচ্ছেন। তিনি চান আমের মৌসুমে তার পরিবারের কেউ যেন হাড়িভাঙ্গার স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়। অন্যদিকে বন্ধুর প্রয়োজন আছে। ঈদ উদযাপনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রংপুরে আসা লোকজন এখন কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। এর আগে, বেশিরভাগ মানুষ অন্তত একবার আমের বাজারে প্রবেশ করেছেন। সবার চোখ বিখ্যাত পটেড আমের দিকে। সোমবার নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, শিপিং কোম্পানি মোড়, নগরীর বাজার, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন আমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে। সবাই বলছেন, সৌভাগ্যক্রমে এবারের ঈদ আমের মৌসুমে পড়ে। তাই ঈদ উপলক্ষে রংপুরে এলেও ফেরার পথে আম সঙ্গে নিয়ে যান।

রংপুরের পটল আম বাজারে এসেছে ১০ জুন। মৌসুম ভরা হওয়ায় দামও সাধ্যের মধ্যে। বর্তমানে রংপুরে প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, অর্থাৎ মানভেদে প্রতি কেজি আমের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কুরিয়ার এবং পার্সেল পরিষেবাগুলিও পাত্রযুক্ত আমের আশেপাশে জমজমাট ব্যবসা করছে। তারা প্রতিদিন প্রায় ৪০ টন আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। এ জন্য বাস টার্মিনাল সংলগ্ন আমের হাটে ইউএসবি পার্সেল সার্ভিসসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের শাখা খুলেছে। এ ছাড়া বাঁশের ঝুড়ি তৈরি, ঝুড়ি সেলাই ও আম পরিবহন করে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ইউএসবি পার্সেল সার্ভিসের শাখা ব্যবস্থাপক ইফতেখার আলম বলেন, আমাদের পার্সেলে প্রতিদিন প্রায় ২৫ টন আম ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পরিবহনে প্রতি কেজি আম ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় ১২ টাকা এবং রাজধানীর বাইরে ১৬ টাকা।

বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঝুপড়ির ব্যবসায়ী একরামুল হক, আবদুস সোবহান ও আশেক আলী জানান, রাত ১২টা পর্যন্ত সেখানে আম বিক্রি হয়। একজন গ্রাহক আম কেনেন এবং বাজারে পার্সেল পরিষেবা বুক করেন। আবার কেউ কেউ আম কিনে নিজেরাই গন্তব্যে নিয়ে যায়। কর্মস্থলে যাওয়া লোকজন ঈদের পর বেশি আম কিনছেন। রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে হান্ডিভাঙ্গা আমের উৎপত্তি। স্বাদ ও সুন্দর গন্ধের জন্য এ আমের সুনাম পৌঁছে গেছে বিদেশেও। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার পদাগঞ্জকে বলা হয় হান্ডিভাঙ্গা আমের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর মৌসুমের শেষ পর্যন্ত প্রতি মণ আম বিক্রি হয়েছিল আট হাজার টাকা দরে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমের শেষ দিকে দাম আরও বাড়তে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় এ বছর ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া কোনো ঝড় বা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমের তেমন ক্ষতি হয়নি। অধিদপ্তরের রংপুর শাখার উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, চাহিদার কারণে জেলায় ব্যাপক হারে পটল আমের চাষ হচ্ছে। আমচাষির সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, যারা হান্ডিভাঙ্গাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর রংপুর থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি আম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।

জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, আম বাজারজাত করতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও আমচাষীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হান্ডিভাঙ্গার বড় পাইকারি বাজার পদাগঞ্জের সাথে জেলা শহরের সংযোগ সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *