শেষ দিনেও দর্শনার্থীদের ভিড়।মেলায় এক জোড়া বিড়ালের দাম চার লাখ টাকা!

0

কেউ গয়াল, কেউ মহিষ, কেউ গরু এনেছেন।  কারো এস্টলে ঘোড়া  আবার কারো কাছে কুকুর এবং বিড়াল ছিল। অনেকেই বিভিন্ন জাতের কবুতর ও পাখি নিয়ে এসেছেন। ছিল ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, খরগোশ, হাঁস-মুরগি। ইট-পাথরের নগরীতে দুই দিনব্যাপী পশুসম্পদ মেলায় মানুষ একসঙ্গে এত পশু দেখতে পায়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত এ মেলার গতকাল রোববার ছিল শেষ দিন। উদ্বোধনী দিনের মতো গতকালও মেলা পরিদর্শনে আসেন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী। বিশেষ করে অদ্ভুত সব প্রাণী দেখার প্রতি শিশুদের আগ্রহ ছিল স্পষ্ট। এই দুই দিনে আট কোটি টাকার বেশি মূল্যের পশু বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শুধু বিক্রি নয়, কৃষকদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করা এবং মানুষকে পশুর প্রতি আগ্রহী করে তোলা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।

মেলার আয়োজন করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।

বিডিএফএ সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, সারাদেশ থেকে গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস-মুরগি ও পোষা প্রাণীর বড় আড়াইশ খামারি এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। ৩০০টি স্টলে, কৃষকরা তাদের খামার থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং সবচেয়ে বড় প্রাণী নিয়ে আসে। দুই দিনে দুই লাখের বেশি দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, জনগণের উৎসাহ ও আগ্রহে উদ্যোক্তারা নতুন প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছেন। সরকারের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যুক্ত করা হয়েছে। মেলার অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ খাত আরও সমৃদ্ধ হবে। আমরা বার্তা দিতে চাই যে উচ্চ শিক্ষিত যুবকদেরও কৃষিকাজে আগ্রহী হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গরু-ছাগল-দুম্বা-ভেড়া বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, পোষা প্রাণী ৩ কোটি ২০ লাখ এবং পশুর খাবার ও ওষুধ বিক্রি হয়েছে ৭০ লাখ টাকায়। মেলায় দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের যাত্রামুড়ার সিয়ান এগ্রো একটি বিশাল গরু নিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির নেতা আতিকুর রহমান জানান, তার খামারে একটি মাত্র গরু রয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম থেকে কিনেছেন।

গরুর স্টলে দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে ভুট্টি গরু। ছোট গরুর শরীর স্পর্শ না করে কেউ ফেরেনি। ভুট্টি গরুর মালিক আবুল হোসেন বলেন, ‘এই গরুর মাংস খুবই সুস্বাদু। মাঝারি আকারের একটি ভুট্টি বিক্রি হয় এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায়। মাংস ১০০ কেজির বেশি হবে।

প্রদর্শনী এলাকায় প্রবেশের পর বাম পাশের স্টলে কুকুর, বিড়াল, হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাবেন। দর্শনার্থীরা গোল্ডেন কুন নামক সোনালি হলুদ পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে, যার এক জোড়া দাম ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া কাঙ্গাম চিতা, ইয়াকুত লাখা, মেন্দিয়া লাখা, হীরা লরিসহ হরেক নাম, বর্ণ ও আকৃতির পাখির মেলা বসেছে। কবুতরের দাম যথাক্রমে ৬০,০০০ টাকা এবং ৫৫,০০০ টাকা।

৪০ হাজার টাকা মূল্যের এক জোড়া কবুতর রয়েছে সাইদ বাশার কবুতর হোমের স্টলে। স্টলের কর্মীরা জানান, তাদের খামারে আড়াই লাখ টাকা মূল্যের কবুতর রয়েছে। কিন্তু তাদের এখানে আনা হয়নি।

জেইন আসিলের স্টলে চারটি মোরগ ও দুটি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ইরাকুট লাখা নামের সাত বছর বয়সী একটি মুরগির দাম ২৫ হাজার টাকা।

‘সাখের মুরগিওয়ালা’ নামের সংগঠনটির নেতা সাজ্জাদুর ইসলাম ১২ ধরনের আকর্ষণীয় মুরগির বাচ্চা নিয়ে বগুড়া থেকে এসেছেন। তার খামারে ১৪টি জাতের শতাধিক মুরগি রয়েছে।

মেলায় বেশ কয়েকটি স্টলে দেখা যায় নানা ধরনের বিদেশি বিড়াল। এক জোড়া বিড়ালের দাম দুই থেকে চার লাখ টাকা।

এদিকে গতকাল মেলায় বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির জমজমাট র‌্যাম্প শো অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিকেলে প্রদর্শনীর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত মানুষ এখন কৃষক। বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এসে কৃষিকাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেজর ডিগ্রি নিয়ে চাকরি না দেখে নিজেও পশু উৎপাদন ও বিপণন করে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন, পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। মেলার মাধ্যমে তারা আরও উজ্জীবিত হবে। তাদের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *