ব্যাংক আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে।কোনো কোনো ব্যাংক ৮ শতাংশ সুদ দিচ্ছে

0

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। সঞ্চিত টাকায় সংসার চালাচ্ছেন অনেকে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের খবর পাওয়ায় ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রবণতা রয়েছে। এ অবস্থায় অনেক ব্যাংক আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে। কিছু ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার সীমা ৯ শতাংশ বজায় রেখে আমানতের ওপর ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। অন্যদিকে চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণও বেড়েছে। এখন এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্কগুলি প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোন ব্যাংককে প্রতি মাসে কত সুদ আমানত নিচ্ছে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। সুদের হার বাড়ানো বা কমে গেলে ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও নোটিশ দিতে হবে। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাঙ্ক মেয়াদি আমানতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। আগের মাসে এটি ছিল সর্বোচ্চ ৭.৫ শতাংশ। আর একটি ব্যাংক যেটি ৮ শতাংশ ডিপোজিট চার্জ করে তা হল পদ্মা। এক্সিম ব্যাংক জানুয়ারিতে মুনাফার পরিমাণ বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করেছে। আগের মাসে এটি ছিল সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। এবি ব্যাংক জানুয়ারিতে মেয়াদি আমানতে ৭.২৫ শতাংশ সুদের হার ঘোষণা করেছে। আগের মাসেও যা ছিল সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৫.৭৫ শতাংশ থেকে ৬.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

তহবিল সংকটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোও সুদের হার বাড়াচ্ছে। এমনকি গত ডিসেম্বরেও সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে মেয়াদি আমানত নেওয়া রূপালী ব্যাংক ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমানতের পরিমাণ এবং মেয়াদ বিবেচনা করে বিশেষ ক্ষেত্রে ৭.৩০ শতাংশ সুদ দেওয়া হয়। জনতা ব্যাংক এখন ৭ শতাংশ সুদে মেয়াদি আমানত অফার করছে। নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সুদের হার ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করেছে। স্থায়ী আমানতের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো সঞ্চয় হিসাব, বিশেষ নোটিশ জমা এবং আন্তঃব্যাংক তহবিল সংগ্রহের খরচও বাড়িয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, ব্যাংকের টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছেন। কেউ টাকা নিয়ে নিজের জন্য রাখছিলেন। কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। সুদের হার না বাড়িয়ে এসব টাকা ব্যাংকে ফেরত আনার কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া গড় মূল্যস্ফীতি এখন ৮ শতাংশের কাছাকাছি। কম সুদ প্রদানের অর্থ হল আমানতকারীর ক্ষতি। এসব কারণে ৯ শতাংশ সুদের হার সীমা বহাল থাকলেও ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে আমানতের গড় সুদের হার ছিল ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। এক বছর আগে এটি ছিল ৩.৯৯ শতাংশ। সুদের হার বাড়লেও আমানতের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে আমানত মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। তবে এক বছরে ঋণের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে ডিসেম্বর শেষে বাকি দাঁড়ায় ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সব সময়ে ঋণ এবং আমানতের ভারসাম্য সুদ সহ গণনা করা হয়। এর মানে আসল আমানত খুব কম বেড়েছে। যার কারণে ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের আমানত সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিচ্ছে। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর আগের দিন বুধবার আন্তঃব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। ওই দিন বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৮ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা ঋণ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সুদ না বাড়িয়ে এখন আমানত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে আমানতের সুদ বাড়লেও ঋণ বাড়াতে না পারায় তাদের সুদের আয় কমে যাবে। আবার ডলার সংকটের মধ্যে আমদানি ব্যয় কমাতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে শুধু ডিসেম্বরেই আমদানি কমেছে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ব্যাংকের কমিশন আয় কমেছে। ফলে ঋণের সুদের হার সীমা প্রত্যাহার বা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *