অস্বাভাবিক খরচ, সাধারণ মানুষের জন্য হজ করা কঠিন

0

এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, এক লাফে বিপুল পরিমাণ খরচ বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে হজযাত্রীদের স্বার্থ রক্ষা করছে কি না এমন প্রশ্ন তুলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করছেন কেউ কেউ।

গত বছর হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এবার হজযাত্রীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। জনপ্রতি খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো তাদের সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যা সরকারের চেয়ে ১০ হাজার ৩৯৭ টাকা কম। এগুলোর দাম ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। অন্যান্য বছর সরকারি প্যাকেজের চেয়ে বেসরকারি হজ প্যাকেজের খরচ বেশি, এবার তার উল্টো।

হজযাত্রীরা বলছেন, হাবের পক্ষ থেকে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন সরকারের চেয়ে কম খরচে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, মানে সরকার চাইলে কম টাকা নিতে পারত। এতে প্রমাণ হয় ধর্ম মন্ত্রণালয় সাধারণ হজযাত্রীদের সামর্থ্য নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করেনি।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘হজের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। ডলার ও রিয়ালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে হজ প্যাকেজে। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজ ‘সি’ ক্যাটাগরির। আর বেসরকারি সংস্থাগুলো ‘ডি’ ক্যাটাগরির সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাই তাদের দাম একটু কম। তিনি আরও বলেন, ঘোষিত প্যাকেজের চেয়ে খরচ কম হলে হজযাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আগেও এভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজের খরচ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারের মতো বেসরকারি হজ প্যাকেজের ঘোষণায় শুধু ‘সি’ ক্যাটাগরির সুবিধার কথা বলা হয়েছে।

হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন যে হাব ঘোষিত প্যাকেজ পবিত্র হারাম শরীফের ১,৫০০ মিটারের মধ্যে হজ্বযাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করবে। অন্যদিকে সরকারি প্যাকেজে দুই হাজার মিটারের মধ্যে আবাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

গত বছর হজে যাওয়ার টাকা জমা দেন রাজধানীর বাড্ডা থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল রানা। পরিবারের আরেক সদস্যসহ দুইজনের কাছে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রতারণা করায় তিনি হজে যেতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি ২ লাখ টাকা উদ্ধার করতে পারলেও বাকি টাকা পাননি। তারা এবারও হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু হজ প্যাকেজের দাম বেশি হওয়ায় চিন্তিত সোহেল।

তিনি বলেন, আমি হজে যাওয়ার ইচ্ছা ছাড়িনি। প্রতারিত হলেও আমি আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু এত টাকা খরচ হওয়ায় জমি বিক্রি না করে হজে যেতে পারছি না। তাই ভাবছি কি করব। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, হজ ব্যয়ের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে দেখলে টাকা কম হতো।

কেউ কেউ আবার খরচ বাড়ার কারণে হজ না করার সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, তার এক নিকটাত্মীয় হজে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, কম খরচে সরকারি প্যাকেজ ঘোষণা করা সম্ভব হয়েছে কি না, তা সরকারের প্রতিনিধিরাই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই। হাবের সদস্যরা তাদের নিজস্ব প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

সরকারি প্যাকেজে ব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের জন্য উচ্চমানের এসি বাস থাকবে। বেসরকারি হজ যাত্রীদের তুলনায় সরকারি যাত্রীরা কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে হজ নিয়ে আলোচনা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বছর তা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *