স্কুলের ক্লাস বন্ধ করে মাঠে উকিল সাত্তারের ভোটের গান

0

ক্লাস শেষে বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বহুল আলোচিত প্রার্থী আইনজীবী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ আয়োজন করে। আহমেদ হোসেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। মঞ্চ নেওয়া নিয়ে বিতর্কের কারণে নেতারা জনসভায় বক্তব্য না দিলেও বিকাল চারটা পর্যন্ত মাইক্রোফোনে উচ্চস্বরে ভোটের গান বাজানো হয়। তাই ক্লাস হয়নি।

সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আড়াইসিধা কে.বি. এটি হাই স্কুলে ঘটেছে। যদিও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম মিয়া দাবি করেন, ক্লাস বন্ধ হয়নি। তিনি সমকালকে বলেন, “নেতাদের বক্তৃতার জন্য দেড় ঘণ্টার টিফিন বিরতি দেওয়া হয়। টিফিনের পর দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া হয়। সেলিম মিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। .

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ উদ্দিন অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, “সকাল একটা পর্যন্ত ক্লাস চলছে। তখন মাইকের আওয়াজে ক্লাসের পরিবেশ ছিল না। কেন নির্বাচনী সভা করতে দেওয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাব দেননি প্রধান শিক্ষক? স্কুলের দিনগুলিতে স্কুলের মাঠ।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বন্ধ। এরপরও ‘উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থক গোষ্ঠী’র ব্যানারে আয়োজিত জনসভা শুরু হয়নি। সকাল ২.৩০ টা থেকে ২.৩০ টা পর্যন্ত সব ক্লাসরুম খালি থাকে। একটি কক্ষে ইভিএমে ভোটের মহড়া চলছে। তখন স্কুলের মাঠে তৈরি প্যান্ডেলে গান বাজত। মাঠের ভেতরে ও বাইরে চারটি মাইক্রোফোন ও দুটি লাউডস্পিকারে গান বাজানো হতো। স্কুল ড্রেস পরা শিক্ষার্থীরা মঞ্চের সামনে বসে মনমুগ্ধকর গান শুনতেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রী জানান, সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হয়। দুটি শ্রেণী আছে। এরপর আর তা হয়নি।

আচরণবিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আইনজীবী সাত্তারের পক্ষে জেলা সভাপতি ও ব্রাক্ষনবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সভায় বক্তব্য রাখতে আসেন। এ সময় আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের আহমেদ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম মিঠুসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মঞ্চে বসা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় নেতারা। এরপর সভা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে আহমদ হোসেন বলেন, সোমবার দুপুর ১২টায় নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে। এ কারণে আমিসহ অন্য নেতারা কথা বলেননি। আওয়ামী লীগ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে না।

ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, স্কুলের ক্লাস বন্ধ করে নির্বাচনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা জানি না।সভার আয়োজকরা বলতে পারবেন।

দলের সিদ্ধান্তে গত ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। যে সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন তাদের একজন হলেন উকিল সাত্তার। পদত্যাগের কারণে আসনটি শূন্য হওয়ার ২০ দিনের মধ্যে তিনি উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নামেন। বিএনপি তাকে বহিষ্কার করেছে। তবে আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন করে এবং তাকে উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। দলটির তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জাতীয় পার্টির দুইবারের সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাও বিদায় নিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত উকিল সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আসিফ আহমেদ চারদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *