বাকৃবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

0

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য ড.লুৎফুল হাসানসহ প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ নিয়োগে অনিয়ম, দুটি বাসভবন ব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ করেছে।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পূর্ব ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সাইদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক পূর্ব ইসলাম বলেন, উপাচার্য মনোনীত কয়েকজনই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই গুটিকয়েক অনুপ্রবেশকারী, অসৎ ও নীতিহীন ব্যক্তিদের দ্বারা প্রশাসন পরিচালিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ব্যর্থতায় দীর্ঘ সেশনজট হয়েছে। করোনার কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে বারবার বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সেশনে আটকে আছে, যা আগে কখনো হয়নি। প্রশাসনিক শিথিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ পিএইচডি শিক্ষার্থীকে সব প্রক্রিয়া শেষ করেও ডিগ্রি নিতে প্রায় দেড় বছর বসে থাকতে হয়েছে।

ড.পূর্ব ইসলামের মতে, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া শিক্ষক বদলি, একই ব্যক্তিকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, এমনকি বাছাই কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, উপাচার্য নিয়োগের পর থেকে বাকৃবি তার জন্য বরাদ্দকৃত বাসা ছাড়াও আগের বাড়িটি ব্যবহার করে আসছে। একই সময়ে দুটি বাসা ব্যবহার করা বেআইনি। বিভিন্ন কাজের অজুহাতে প্রায়ই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন উপাচার্য। উপাচার্যের অনুপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে। তিনি দাবি করেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) অধীনে ৬৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। উপাচার্যের ব্যর্থতার কারণে প্রকল্পের তিন বছর মেয়াদে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। মোট বরাদ্দের মাত্র ৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে বাকি টাকা ফিরে গেছে।

অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হয়রানিসহ একাধিক ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনে বিভক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি, বাড়ি বরাদ্দ কমিটির অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির জন্য দায়ী উপাচার্য ও তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা।

দুটি বাসভবন ব্যবহারের বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চল খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ। উপাচার্যের বরাদ্দকৃত বাসভবনটি ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ। একটি তদন্ত কমিটি প্রকৌশলীদের মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাই করে। সংস্কার ছাড়া বাসভবনে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। শীঘ্রই বাসস্থান সংস্কার করা হবে।

ডিপিপি প্রসঙ্গে উপাচার্যের বক্তব্য, আরও উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের আওতায় কিছু কাজ চলমান রয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০১৮ সালে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির বিষয়ে কথা হয় উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরকারের নীতিনির্ধারণী সভা-সেমিনারে অংশ নিতে আমাকে মাঝেমধ্যে ঢাকায় যেতে হয়। অন্য সময় ক্যাম্পাসেই থাকি।’ বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, বাড়ি বরাদ্দের জন্য আলাদা কমিটি আছে, তারা বিষয়গুলো দেখবে।

এ বিষয়ে আলাদা কমিটি রয়েছে বলে জানান উপাচার্য। কমিটিগুলো কাজ করছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিচার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের বিভাজনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘দুই পক্ষের সঙ্গে কয়েকবার বসে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো আপস সম্ভব হয়নি। তাদের দলীয় নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।’

নিয়োগ অনিয়ম নিয়ে উপাচার্যের মন্তব্য, নিয়োগ ও বদলি নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। তিনি দাবি করেন,  তার কোনো আত্মীয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *