ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা ভালো নেই

0

গুরুদাসপুর মশিন্দা শিকারপুর গ্রামের মসজিদের ইমাম মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করে মাস শেষে বেতন পান ৫ হাজার টাকা। মাঝে মাঝে দুই মাস পরও বেতন পান। তিনি বলেন, ‘পরিবারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মাস শেষে ৫ হাজার টাকা বেতনে সংসার চলে না। প্রতি মাসেই ঋণ বাড়ছে।’

একই অবস্থা নগর সদরের খামারনাছকয়েদ মসজিদের ইমাম মহরম আলীরও। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সবজি বা ডাল খেয়েই সময় পার করছি। সবজি কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ঋণের চাপ বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের পেশায় ছুটি নেই। ঝড়বৃষ্টি বা কনকনে শীতের জন্য কোন অজুহাত নেই। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিষ্ঠার সাথে কর্তব্য পালন করতে হয়।

গুরুদাসপুর উপজেলায় প্রায় ৪৪৪ জন ইমাম ও ৪১০ জন মুয়াজ্জিন রয়েছেন। অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস শেষে ইমাম পান চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং মুয়াজ্জিন মাস শেষে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে সংসারের চাকা ঘোরে না। পৌরসভার চেয়ে গ্রামীণ এলাকার অবস্থা খারাপ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মসজিদ রয়েছে ৪৪৪টি। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০টি শব্দ। বাকিগুলো জামে মসজিদ। প্রায় প্রত্যেকেরই একজন ইমাম এবং একজন মুয়াজ্জিন রয়েছে। অনেকে একই সাথে উভয় দায়িত্ব পালন করে। ইমামতির পাশাপাশি ১৫৪ জন মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তাদের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা। উপজেলায় সরকারিভাবে কোনো মসজিদ না থাকলেও চলছে মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ।

উপজেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম সর্বোচ্চ ১১ হাজার টাকা বেতন পান। মুয়াজ্জিনের বেতন ৭৫০০ এবং খাদেমের ৭০০০। এই মসজিদের সভাপতি ইউএনও। কেন্দ্রীয় মসজিদ ছাড়া অন্য কারোরই এমন বেতন কাঠামো নেই।

কথা হয় উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম জহুরুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, উপজেলার একমাত্র কেন্দ্রীয় মসজিদ এটি। ইমামতির পাশাপাশি তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন। দিনগুলো কোনোরকমে কেটে যাচ্ছে।

একই মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. মাসনুন হাসান জানান, সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনে তার সংসার চলে না। স্ত্রীসহ তার চার সন্তান রয়েছে। মুয়াজ্জিন পেশার বাইরে অন্য কোনো আয় নেই। মসজিদ কমিটির দেওয়া বেতনের ওপর নির্ভর করতে হয়। মাস শেষে এ টাকা নিয়ে হিসাব মিলছে না। আগামী দিনগুলো কেমন যাবে তা নিয়ে চিন্তিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *