ডেঙ্গুতে মারাযাওয়া চারজনের মধ্যে একজন শিশু

0

সাত বছর বয়সী স্বপ্নিল বাহাদুর রাজধানীর বিএএফ শাহীন স্কুলের ছাত্র। গত ৮ জুলাই জ্বর, বমি ও পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আদ-দ্বীন। ডাক্তাররা উপসর্গ দেখে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করেন। ফলাফল নেতিবাচক। তখন শিশুটির রক্তে ৭০ হাজার প্লেটলেট ছিল। প্লেটলেট দেওয়ার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নতুন ডেঙ্গু পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে। চিকিৎসকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গত ৯ জুলাই হাসপাতালে মারা যান স্বপ্নীল। শুধু তাই নয়, এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ২৫ শতাংশ শিশু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে ডেঙ্গুতে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন শিশু। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এ পর্যন্ত ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সংখ্যাটা ৭।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে স্বপ্নিলের মতো অনেকেরই তথ্য নেই।

২০০০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। সেই বছর ৫.৫০০ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং ৯৩ জন মারা গিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালে না আসা এবং শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ডেঙ্গুতে শিশুরা বেশি মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেরিতে দেখা যাচ্ছে। যতক্ষণে উপসর্গ দেখা দেয় ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। যার জেরে মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশই শিশু। ৬৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক। এ বছর নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের ৬০ শতাংশ পুরুষ। দেশে ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার ডেঙ্গু রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সারাদেশে ১৮টি এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে মুগদা এলাকায়। বেশির ভাগ রোগীকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোগীদের ৪৭ শতাংশই ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের। ৩৬ শতাংশ রোগী ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশনের এবং ১৭ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে।

মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারাদেশে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪৭ শতাংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৭ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ১৫ শতাংশ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আবদুলগাহ বলেন, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। এছাড়া শিশুরা বেশির ভাগ সময় ঘরে থাকে। এডিস মশা দিনের বেলায় ঘরে কামড়ায়। মশারি ছাড়া ঘুমানোর কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। ডেঙ্গু জ্বরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বেশি হয়। শিশুরা শীঘ্রই হতবাক হয়ে যায়। শিশুদের কিডনি, লিভার ফেইলিউর খুব দ্রুত হয়। যে কারণে ডেঙ্গুতে তাদের মৃত্যুর হার বেশি।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেঙ্গু থাকলে শিশুর অবস্থা জটিল হয়ে উঠছে। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই চিকিৎসা নিতে আসছেন না। যত বেশি দেরি হবে, ঝুঁকি তত বেশি। তাই জ্বর হলে পরীক্ষা করা উচিত। বমি, পেট ভারী এবং মাথাব্যথা- এই উপসর্গগুলিকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আনতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস রোগ নির্ণয় কর্মসূচির ডিপিএম ডা. মোঃ ইকরামুল হক জানান, সিভিল সার্জনের মাধ্যমে ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে চিঠি দিয়ে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *