ডেঙ্গুতে কাবু চট্টগ্রাম ১০টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে

0

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৮৫ শতাংশই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিএইচসিআইসি) এলাকার বাসিন্দা। এদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। দুই দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে উদ্বেগ-আতঙ্ক।

এদিকে, ঢাকা ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তদন্তের জন্য চট্টগ্রামে আসায় করপোরেশনের কিছু এলাকাকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের অন্যতম ‘হটস্পট’ বলা হচ্ছে। তারা অন্তত ১০টি এলাকাকে হটস্পট বলে। তবে মশার উপদ্রব ঠেকাতে কাগজে কলমে কোটি কোটি টাকা খরচের কথা বললেও সংগঠনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ অধিকাংশ বাসিন্দার।

চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও এ ধরনের রোগী বাড়ছে। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি মাসের ২৪ দিনে রেকর্ড ২৯৬টি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে কাবু হয়েছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২২৩ জন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। বাকি ৭৩ জন বিভিন্ন উপজেলার।

এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার একদিনে দুইজন এবং আগের দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও একজন। নিহত তিনজনই নারী।

হঠাৎ রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে আইইডিসিআর-এর বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামে গিয়ে এসব এলাকাকে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের অন্যতম ‘হটস্পট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত সাতকানিয়া, পটিয়া ও সীতাকুণ্ডে।

গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষের শরীরে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব ধরা পড়লেও সিটি করপোরেশনের মশা নির্মূল কার্যক্রম এখনো চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার একাধিক বাসিন্দা। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে মশা নিরোধক ক্রয়ে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া চলতি অর্থবছরে মশা নিধনের জন্য আরও ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে আগের চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হঠাৎ করেই ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক আচরণে আমরা চিন্তিত। এ বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরকে চিঠি দিয়েছি। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এডিস মশার জন্ম রোধে বাড়ির আশপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বাচ্চাদের সাথে আরও সতর্ক থাকুন।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। সবার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। একই পরিবারের কয়েকজনের পাশাপাশি রেকর্ড সংখ্যক শিশুও আক্রান্ত হয়। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাসেম দাবি করেন, মশা নিধনের স্প্রে ও ফগ মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত যত্রতত্র কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে যেসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে সেদিকে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী বলেন, পানি জমে থাকায় কিছু মালিককে ইতোমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *