বেড়েছে নদী দখল
নদী দখল করা দূষণ ছড়ানো সবই ফৌজদারি অপরাধ। এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া আদালতের রায় এবং নদী রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে দেশে নদীতে নির্যাতন বাড়ছে। দখলদাররা দিন দিন বাড়ছে। পানি দূষিত থেকে বেশি দূষিততর।
ন্যাশনাল রিভার প্রোটেকশন কমিশনের ২০১৯ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে নদী দখলকারীর সংখ্যা ৬৩,২৪৯ যাইহোক, একই বছরে, কমিশনের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নদীর অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়। সেই সময় সারা দেশে দখলদারদের সংখ্যা ছিল ৫৭,৩৯০, ১৮হাজার ৫৭৯টি দখলও উচ্ছেদ করা হয়েছে। তার পরেও, ২০১৯ সালে, নতুন দখলদারদের সংখ্যা পাঁচ হাজার বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী দূষণের জন্য কাউকেই ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও নদী প্রান পাচ্ছে না। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য বছরব্যাপী ব্যাপক কর্মকাণ্ড (ক্র্যাশ প্রোগ্রাম) ঘোষণায়ও দখল বন্ধ হচ্ছে না।
দেশের নদীগুলোর এমন এক করুণ অবস্থায় আজ বিশ্ব নদী দিবস পালিত হচ্ছে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মানুষের জন্য নদী’। এই দিনে সারা বিশ্বে প্রায় এক হাজার কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হবে।
নদী সুরক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুলনা বিভাগে দেশে সবচেয়ে বেশি নদী দখলকারী রয়েছে। এখানে ১১হাজার ২৪৫ জন দখল রয়েছে। এই বিভাগে ময়ূর নদী সবচেয়ে বেশি দখল করে আছে। নদী অধিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে – ২,২৪৪ সুরমা নদীতে সবচেয়ে বেশি দখল করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগে নদী দখলকারীর সংখ্যা ৮,৮৯০। এই জেলায় শীতলক্ষ্যা সবচেয়ে বেশি দখল করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালে ৮,৬১১ দখলে, ময়মনসিংহে ৪,৮৪৮, চট্টগ্রামে ৪,৭০৪, রংপুরে ২,৭৬০ এবং রাজশাহীতে ২,৪৪জন দখলদার রয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা দেশে ১৮,৫৭৯টি উচ্ছেদ করা হয়েছে। করোনা সময়কালে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে উচ্ছেদের হার কমে এসেছে ২৯.৬৬ শতাংশে।
অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ২০১১ সালে সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রকৃতি, জলাভূমি, বন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা। খসড়াটি সংসদে যাওয়ার পর ‘নদী’ শব্দটিও সেখানে ছিল। কিন্তু সেখান থেকে এমপিরা ‘নদী’ শব্দটি বাদ দেন। তিনি বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রকে দায়িত্ব দিয়েছে যা রাষ্ট্র যদি মেনে না নেয় তাহলে সাধারণ মানুষের কিছুই করার থাকে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। কারণ এই দেশটি নদীর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নদীগুলোকে আমাদের নদীর মতো রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নকে নদী ও পরিবেশমুখী করতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নত দেশের উন্নয়ন মডেল বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে। এই দেশে একই মডেল অনুসরণ করার এখন কোন যুক্তি থাকতে পারে না।
নদীর বিশাল অর্থনৈতিক অবদানের কথা উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের মোট যাত্রীদের এক-তৃতীয়াংশ এখনো নদীপথে যাতায়াত করে। মাছ এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থায় নদীও ভূমিকা পালন করে। তাই নদীকে সংকুচিত করা যাবে না। নদীকে রক্ষা করতে হবে, নদী থেকে বালু উত্তোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করা উচিত। খাল -বিল -এর সাথে নদীর সবকিছু আছে। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা দরকার।