এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক পাশ করেছেন, পায়ের আঙুলে কলম দিয়ে

উভয় হাত প্রায় অকেজো। তার আঙুল ছোট, এবং হাত নাড়ানোর ক্ষমতাও তার নেই। কিন্তু রাজিয়া খাতুন হাল ছাড়েননি। তিনি একের পর এক এসএসসি, এইচএসসি এবং স্নাতক পাশ করেছেন, তার পায়ের আঙুলে কলম দিয়ে। তিনি মাস্টার্স পরীক্ষাও দিয়েছেন।

সম্প্রতি, রাজিয়া ঠাকুরগাঁও শহরের বার অ্যাসোসিয়েশনের পাশের টেবিলে বসে পায়ে কলম দিয়ে চাকরির আবেদন লিখছিলেন। চাকরিই এখন তার একমাত্র ইচ্ছা। রাজিয়ার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে। বাবা ফয়জুল হক একজন দিনমজুর, মা রহিমা বেগম একজন গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ছোট রাজিয়া জন্ম থেকেই শারীরিকভাবে অক্ষম। উভয় হাত প্রায় অকেজো, কিন্তু দারিদ্র্য এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তিনি হার মানতে দেননি। পা দিয়ে লিখে লেখালেখি চালিয়ে গেছেন।
চার ভাইয়ের কেউই প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করতে পারেননি, তবে রাজিয়া একাই ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক পাশ করেছেন। ২০২১ সালে, সে মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়, কিন্তু একটি বিষয়ে ফেল করে। ২০২৩ সালে, রাজিয়া একই এলাকার একজন দিনমজুর আবু সুফিয়ানকে বিয়ে করে। পরিবারের একটি মেয়ে ছিল। তার বয়স এখন তিন বছর। পরিবারটি দরিদ্র হলেও, ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে একটি ঘর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে হঠাৎ ছন্দে পরিবর্তন আসে এবং সুফিয়ান কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় আহত হয়। এখন সে আর আগের মতো কঠোর পরিশ্রম করতে পারে না।
এই পরিস্থিতিতে, রাজিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে চাকরির আবেদন নিয়ে যায়। সে বলে, ‘আমি আমার হাত দিয়ে কিছুই করতে পারি না, তবে আমি আমার মন দিয়ে সবকিছু করতে পারি। আমি কেবল একটি চাকরি চাই যাতে পরিবারটি টিকে থাকে।
যদিও জেলা প্রশাসক তাকে তার স্বামীর জন্য একটি ভ্যান বা একটি দোকানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজিয়া তার যোগ্যতা অনুসারে চাকরি চায়। সে বলে, ‘আমি কয়েকটি কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। লিখিত পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। কিন্তু যখন তারা মুখোমুখি গিয়ে আমার শারীরিক অবস্থা দেখে, তারা আর আমাকে ফোন করেনি। আমি খুব অপমানিত বোধ করি। আমি শুধু একটা সুযোগ চাই প্রমাণ করার জন্য যে আমিও এটা করতে পারি।’ স্বামী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘রাজিয়া কেবল আমার স্ত্রী নন, তিনি আমার অনুপ্রেরণা। তিনি নিজের পায়ে রান্না করেন, ঘর সামলান এবং তার সন্তানদের দেখাশোনা করেন। আমি সরকারের কাছে রাজিয়ার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি।’ ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন, ‘রাজিয়া একজন ব্যতিক্রমী উদাহরণ। যে সাহস এবং অধ্যবসায়ের সাথে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন তা সমাজে বিরল। এই ধরনের শিক্ষিত প্রতিবন্ধী মহিলাদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।’