বিদ্যুতের দাম বাড়ছে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা

0

মার্চ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের দাম। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মার্চ থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হবে। গ্যাসের দামও বাড়ছে। তবে আবাসিক ও শিল্প পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়বে না। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ছে।

২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩-এ ৫ শতাংশের সর্বশেষ খুচরা মূল্যবৃদ্ধি নতুন বিদ্যুতের হারের জন্য সেট করা হয়েছিল, মার্চ থেকে কার্যকর। সেই হার অনুযায়ী, খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ওজনযুক্ত গড় বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭ টাকা ৮৫ পয়সা। জানুয়ারিতে তা ছিল ৭ টাকা ৪৮ পয়সা। ওই সময় তিন মাসে তিন দফা দাম বাড়ানো হয়।

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দেশে জ্বালানির ওপর নির্ভর করে বিদ্যুতের দাম ওঠানামা করে। তাই এর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। অন্য কোন উপায় নেই। নিম্ন পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৩৪ পয়সা থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে নসরুল বলেন, ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে ভর্তুকি আরও বেড়েছে। ভর্তুকি ধীরে ধীরে সমন্বয় করা উচিত। আমরা আগামী তিন বছরের জন্য এটি সমন্বয় করব, যাতে সমন্বয় একটি সহনীয় পর্যায়ে হয়, আমরা একটি ব্যবস্থা নিয়েছি। বিদ্যুতের উপর ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে মূল্য সমন্বয়ের জন্য যাচ্ছি। আমরা তেলের জন্য গতিশীল মূল্য নির্ধারণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয় না। সেটা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রাহকদের জন্য। আবাসিক ব্যবহারের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ছে না। শিল্পেও গ্যাসের দাম বাড়ছে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো: বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে, যা চলতি ফেব্রুয়ারির বিল থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে সরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, আইপিপি ও রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে গ্যাসের ইউনিট মূল্য ছিল ১৪ টাকা। দাম বাড়লে এর সঙ্গে যোগ হবে ৭৫ পয়সা। এর আগে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট, ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা; এখন সেখানেও ৭৫ পয়সা যোগ হবে অর্থাৎ ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা।

তবে আগের মতোই সার কারখানার জন্য ইউনিট প্রতি ১৬ টাকা, শিল্প সংযোগের জন্য প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা, চা বাগানের জন্য ১১ টাকা ৯৩ পয়সা, হোটেল ও রেস্তোরাঁর জন্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের জন্য ৩৫ টাকা এবং ৩০ টাকা। গৃহস্থালি পণ্যের জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ অপরিবর্তিত রয়েছে। .

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলছেন। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তা কার্যকর হতে শুরু করেছে।

ভর্তুকির চাপ কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫.৩৬ শতাংশে উন্নীত করার পর বার্ষিক ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমবে বলে আশা করছে। গতকাল গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারির পর মন্ত্রণালয়ের এক ব্যাখ্যায় এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

বাংলাদেশে ৮ ধরনের গ্যাস ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে, ১৮ শতাংশ ক্যাপটিভ পাওয়ারে, ২৩ শতাংশ শিল্পে, ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে, ৭ শতাংশ সার উৎপাদনে, ৪ শতাংশ সিএনজিতে এবং ১ শতাংশ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়। চা শিল্প।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ মূল্যের পার্থক্যের কারণে ২০২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকারকে প্রায় ৬ হাজার ৫৭০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২৪. গ্যাসের দাম সমন্বয়ের ফলে, এলএনজির বর্তমান বাজার মূল্য এবং ডলারের বিনিময় হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ভর্তুকি ৬,০০০ কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *