গ্রামাঞ্চলে এডিসের লার্ভা, মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নেই

0

দেশের গ্রামাঞ্চলে যেমন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, তেমনি এডিস মশার লার্ভাও পাওয়া গেছে। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে মশা নির্মূলে কোনো ব্যবস্থা নেই। জেলা শহরগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণের কিছু কার্যক্রম থাকলেও কীটনাশকের ঘাটতি রয়েছে, লোকবলের ঘাটতি রয়েছে, যন্ত্রপাতি নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে শহরের তুলনায় গ্রামে ডেঙ্গু মশার ঝুঁকি বেশি।

এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। গ্রামের মানুষ আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর ডেঙ্গুতে ভুগতে পারে।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৬৫ জন।

এর মধ্যে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৫১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৬৭ শতাংশই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ জেলা ও উপজেলায় সীমিত পরিসরে জরিপ চালিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ডা. বি-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুর পরিস্থিতি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যেটা বাধাহীনভাবে বাড়ছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নিলে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর ডেঙ্গু থাকবে। কখনও কখনও এটি মারাত্মক পরিণত হতে পারে।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরের বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। উপজেলা পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুবই কম। ইউনিয়ন পর্যায়ে সক্ষমতার প্রশ্নই ওঠে না।

এর মানে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দেশের বেশির ভাগেরই নেই। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে।

সরকারি পর্যায়ে প্রতিনিধিরা দেশের আটটি উপজেলায় মশা নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। এসব উপজেলার কোনোটিতেই ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেই। এর মধ্যে ছয় উপজেলায় কার্যক্রম চললেও জনবল সংকট, কোথাও কোথাও মশা নিধন যন্ত্র বিকল।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিনিধি জানান, পৌর শহর থেকে শুরু করে উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটবড়কলা ইউনিয়ন এলাকায় ডেঙ্গু মশার উপদ্রব দ্রুত বাড়ছে। প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা ভিড় করছেন। কিন্তু উপজেলার কোথাও মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেই। উপজেলা শহরে নামমাত্র কার্যক্রম চললেও ফগার মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় ইউনিয়ন এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু ডেঙ্গু নিধনে কোনো ব্যবস্থা নেই। জেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জ পৌরসভায় মাত্র দুটি ডেঙ্গু মশা নিধন মেশিন রয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসা বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বাইরে ব্যবহার করা হয় না।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা তাপস সরকার জানান, ২০ বছরের পুরনো মেশিনগুলো কোনো না কোনোভাবে মেরামত করা হচ্ছে। জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। ফলে জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, পুলিশ সুপারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসা, হাসপাতাল, সার্কিট হাউস, স্কুল-কলেজ ছাড়া সাধারণ মানুষের বাড়িতে মশা নিরোধক স্প্রে করা সম্ভব হচ্ছে না।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে এ পর্যন্ত ১৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ স্প্রে করা হচ্ছে; কিন্তু মশা কমছে না।

ভোলার চরফ্যাশন প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাশনে ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। মৃত্যুর হারও বাড়ছে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা বিরোধী কোনো তৎপরতা নেই। তবে পৌরসভায় রয়েছে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম।

পাবনার ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি জানান, ভাঙ্গুড়া পৌরসভা ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেই। সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়নি। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে নগরীর ৯টি ওয়ার্ডে দুটি ফগার মেশিন, তিনটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন ও ১৭টি সাধারণ মেশিন নিয়মিতভাবে মশা নিধনে ওষুধ ছিটাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *