টাঙ্গাইলে শিক্ষককে বিয়ের নোটিশ।তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে

0

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে বিয়ে ও চাকরিচ্যুতির হুমকি দেওয়ার নোটিশের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। বিচারবহির্ভূত ও অশালীন কাজের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, সজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গত ২৬ জুলাই হিন্দু ধর্মের শিক্ষক রনি প্রতাপ পালকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিয়ের নোটিশ দেন।

অন্যথায় তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়। শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল জানান, ধর্মীয় রীতিনীতি ও জাতপাতের কারণে পাত্রী নির্বাচন করতে সময় লাগে বলে তিনি আগামী অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত প্রার্থনা করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। ২৩ আগস্ট প্রধান শিক্ষক তাকে অফিসে ডেকে সকল শিক্ষকদের সামনে হত্যার হুমকি দেন। নিরাপত্তা চেয়ে পরদিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সহকারী শিক্ষক।

পরে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয় চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরে আসে।

টাঙ্গাইল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের আহবায়ক গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা ও জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ হোসেন ও সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি শুধুমাত্র ২৭ আগস্ট বিয়ের নোটিশ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে।

তদন্তে ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে তিনি গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল বলেন, প্রধান শিক্ষক তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে নোটিশ দিয়ে আমাকে হয়রানি করছেন। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিয়ে না করলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

সজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, অভিভাবকদের ছোটখাটো অভিযোগের কারণে ওই শিক্ষককে বারবার বিয়ের জন্য বলা হয়।

কিন্তু তিনি কখনো বিয়ে করেননি। নোটিশ তাই নিশ্চিত করা হয়.

গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা জানান, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিষয়ে বিদ্যালয়ের সকল কর্মচারী জেলা শিক্ষা অফিসে করা ১২ দফা অভিযোগ প্রায় শেষ। সেখানে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ধোপাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, সজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম একজন দুর্নীতিবাজ। সে বিদ্যালয়ের সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে গোপনে ৩ লাখ টাকা তুলে নেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হিন্দু শিক্ষককে বিয়ের নোটিশ দেন তিনি। আমি প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি পত্রিকায় দেখে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন মাউশিতে পাঠানো হয়েছে। নোটিশ জারি করা প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষক তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে বিয়ের জন্য এমন নোটিশ দিতে পারেন না। এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের এমপিও বরখাস্ত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *