১০০ ট্যানারির বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত

0

সাভারে ট্যানারি শিল্পের প্লট পাওয়ার পরও যেসব কোম্পানি ইজারা চুক্তি সম্পাদন করেনি এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করেনি তাদের বরাদ্দ সাময়িকভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। . তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৪০টি অপারেটিং কারখানার মধ্যে ১০০টির ইজারা চুক্তি নেই। তাই বরাদ্দ বাতিলের ফলে খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের চামড়া খাতের প্রধান সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব। এ সমস্যার কারণে এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমছে, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সাত বছর আগে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের বিসিক লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটিতে সব ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে লেদার সিটি গড়ে উঠেছে তা এখনো পূরণ হয়নি, বরং এ খাতে কোটি কোটি ডলার লোকসান হয়েছে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বিশেষ আমন্ত্রিত সচিবসহ শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, বিসিআইসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চামড়া শিল্পনগরীতে মোট প্লটের সংখ্যা ২০৫টি। এর মধ্যে ১৬২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদনে ১৪০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উৎপাদনে থাকা সব ট্যানারি পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। বরাদ্দকৃত ১৬২টি প্লটের মধ্যে মাত্র ৩২টি প্লটের নিবন্ধন করা হয়েছে। বরাদ্দের সময় অতিবাহিত হলেও ইজারা সই করেনি শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারণ ট্যানারি মালিকরা বলছেন, তারা আক্ষরিক অর্থেই চুক্তি পূরণ করতে পারছেন না। চুক্তির আগে তাদের হাজারীবাগের জমি ফেরত দিতে হবে।

এ বিষয়ে সংগঠনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া। সঙ্গে আলাপকালে আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। হাজারীবাগের ওই জায়গায় ‘ঢাকা আরবান রি-জেনারেশন প্রজেক্ট’ নেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় হাজারীবাগের ওই জমিতে খেলার মাঠ, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা থাকবে। বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত ও প্রকাশের পরই ট্যানারি মালিকরা তাদের জমির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই প্রকল্পের বাইরে যাদের জমি থাকবে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো জমি ব্যবহার করবেন। আর যাদের জমি প্রকল্পের আওতায় পড়বে, তারা ক্ষতিপূরণ পাবে।

অনেকেরই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই

সংসদীয় কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, আদালতের নির্দেশনা ও সন্তোষজনক অভ্যন্তরীণ সম্মতি সাপেক্ষে এ পর্যন্ত ৮৯টি ট্যানারিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। একই বিবেচনায় ৪৩টি ট্যানারির পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ফি ও ডকুমেন্ট জমা না দেওয়ায় বাকিদের ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে আরও বলা হয়েছে যে জহির ট্যানিং ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসমাইল লেদার, এসএন্ডএস ট্যানারি, মেসার্স মমতাজ ট্যানারি, মেসার্স লিয়েন এন্টারপ্রাইজ- এই ৫টি ট্যানারির পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন না করা এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শর্ত পূরণের জন্য পরে তাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ জানান, চলতি বছরের ২৫ জুলাই পর্যন্ত ১২৫টির বেশি ট্যানারি পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে আলেয়া ট্যানারির সার্ভিস সংযোগ (পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ) বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

কমিটি সম্মতি এবং CETP অর্জনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন

ওই বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ট্যানারি শিল্পের কমপ্লায়েন্স অর্জনে গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, একটি সম্ভাবনাময় খাত রপ্তানির দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সঠিক মান শুধু পরিবেশ আইনের বিষয় নয়; কমপ্লায়েন্স অর্জিত না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পরিবেশ আইনে নির্ধারিত প্যারামিটার অনুযায়ী সেন্ট্রাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) পরিচালনা করা উচিত নয়। এছাড়া গ্রুপ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চামড়ার কাজ করা হয়নি। ফলে চামড়া রপ্তানিতে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। তৈরি পোশাক ছাড়া চামড়াসহ অন্য সব খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *